অংশুপ্রতীম পাল, খড়গপুর: ভয়াবহ এবং মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী পশ্চিম মেদিনীপুর। সম্পত্তির লোভে বাবাকে খুন করার অভিযোগ উঠল বড় ছেলের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, গত প্রায় ২৫ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন ওই বৃদ্ধ। সেই নিখোঁজের ঘটনায় তদন্ত করছিল পুলিশ। সঙ্গে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল বৃদ্ধের দুই ছেলেকে। অবশেষে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে যে বাড়ির সেফটি ট্যাঙ্কেই লুকনো বৃদ্ধের দেহ! সোমবার দুপুরে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে সেই সেফটি ট্যাঙ্ক থেকেই উদ্ধার করল বৃদ্ধের পচাগলা দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম সুভাষ প্রামাণিক। ৬০ বছরের ওই বৃদ্ধ গত ১৬ জুন থেকে নিখোঁজ ছিলেন।
ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর (West Midnapore) জেলার সবং থানার অন্তর্গত বলপাই গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পেরুর গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৬ তারিখ থেকে নিখোঁজ থাকলেও পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ জানিয়েছিলেন পাড়ার লোকেরাই। তাঁরা জানান, গত ১৬ তারিখ সুভাষের দুই ছেলে দীপঙ্কর ও শুভঙ্কর মিলে ব্যাপক মারধর করে সুভাষকে। সেই মারধরে জড়িত ছিল মৃত সুভাষের ভাই চন্দন ও তাঁর স্ত্রী গৌরীও। ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন সুভাষ। এরপরই স্থানীয়দের সন্দেহ হয় যে ওই মারধরের ফলেই সুভাষ মারা যান। আর তারপরই দেহ লোপাট করে দেওয়া হয়।
সুভাষের প্রতিবেশী অলক দাস অধিকারী, শক্তিপদ পয়ড়্যা, মধুসূদন মাইতি-সহ অনেকে জানিয়েছেন, তাঁদের নামে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য প্রায়ই মারধর করা হত ওই বৃদ্ধকে। কিন্তু ছেলেদের সম্পত্তি লিখে দিলে বৃদ্ধ এবং তাঁর স্ত্রীকে বাড়ি থেকে ছেলেরা তাড়িয়ে দিতে পারে। এমনটা অনুমান করেই সুভাষ ছেলেদের সম্পত্তি লিখে দেয়নি। বছর খানেক আগে দুই ছেলে মিলে সুভাষকে মেরে হাত-পাও ভেঙে দিয়েছিল তারা। দুই ছেলের অত্যাচারে দু’মাস আগেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী করে বৃদ্ধের স্ত্রী অথবা ওই দুই গুণধর ছেলের মা। সুভাষ এই ঘটনার জন্য ছেলেদেরই দায়ী করতেন। আর তারপর থেকেই শুরু হয় লাগামছাড়া অত্যাচার। অবশেষে গত ১৬ জুন দুই ছেলে ও তাঁদের কাকা-কাকিমা মিলে ব্যাপক মারধর করে সুভাষকে এবং দেহ ঢুকিয়ে দেয় সেফটি ট্যাঙ্কে।
গত ৯ জুলাই প্রতিবেশীরা নিজেরাই বিভিন্ন সূত্রে খবরাখবর নেওয়ার পর নিশ্চিন্ত হন যে সুভাষ কোথাও পালাননি, কোনও আত্মীয় স্বজনের বাড়িও যাননি। এরপর ওই দিনই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ৫ প্রতিবেশী। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। টানা দু’দিন ধরে দুই ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সবং থানার পুলিশ। আর তারপরই ভেঙে পড়ে দুই ছেলে স্বীকার করে নেয় যে বাবাকে মেরে তারা সেফটি ট্যাঙ্কে গুম করে দিয়েছিল। সোমবার পুলিশ গিয়ে সেফটি ট্যাঙ্ক থেকে দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। আটক করা হয় ছোটো ছেলে-সহ দুই স্ত্রী ও মৃতের এক বোন ও এক নাতিকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.