প্রতীকী ছবি৷
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: পুজো আসছে৷ বুকিংও দেদার৷ তবুও স্বস্তিতে নেই দুর্গাপুরের ‘লতা-কিশোর’কন্ঠীরা৷ কারণ, ‘জেনারেশন গ্যাপ’৷ রুচি বদলে যাচ্ছে শিল্পাঞ্চলের শ্রোতার৷ ফলে, শ্রোতাদের মান রাখতে ইচ্ছা না থাকলেও ‘লতা-কিশোরে’র গান বদলে ‘আধুনিক’ হওয়ার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এক সময়ের ‘টপ’ শিল্পীরা৷
সেই ৩০ বছর আগের কথা! যখন দুর্গাপুরের ‘লতা’র বুকিংয়ের হিড়িক৷ ‘লতাদিদি’ তার কল্পনায় নয়, জড়িয়ে গেছেন তাঁর জীবনেও৷ দীর্ঘদিন ধরে শিল্পাঞ্চলে মঞ্চ কাঁপিয়ে বেরানো শিল্পী, কল্পনা শুক্লা বললেন, ‘‘তিরিশ বছর ধরে অন্য কারোর নয়, লতা দিদিই আমার শয়নে স্বপনে৷” অথচ এখন এই স্মার্ট ফোনের যুগে এই বছর পুজোতেও ১৩টি বুকিং, তাও পুজোর মুখে গলার কাছে দলা পাকিয়ে উঠছে শুক্লার৷ তাঁর আরাধ্য ‘লতা দিদি’ একা আর বইতে পারবে না৷ কারণ? বুক ফাটা একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘টপ টু বটম লতা দিদির গানেই দু’ঘণ্টার শো করে এসেছি৷ বছর খানেক ধরে শুরু হয়েছে সমস্যা৷ এখনকার শ্রোতারা শুনতে চাইছে আকৃতি কক্কর, শ্রেয়া ঘোষালদের গান৷ আইটেম নম্বর৷ ডান্স নম্বর৷ ঝমাঝম মিউজিকের গান৷”
[গরু কেন কম দুধ দিচ্ছে? বিতর্কে রক্তারক্তি কাণ্ড মালদহে]
কষ্ট চেপে কল্পনা বললেন, ‘‘মন থেকে না চাইলেও অন্যের ট্রাকে বা গলা নকল করছি স্রেফ পেটের টানেই৷ এখনকার শ্রোতা চায় আরও গমগমে আওয়াজের আরও আরও বিটস ও হাস্কি নম্বর৷ আরব সাগরের অস্থির ঢেউ গুনতে গুনতে সুর সম্রাঙ্গী লতা মঙ্গেশকরও সম্ভবত একই যন্ত্রণায়৷ কিশোর কুমারের ‘ম্যায় শায়র বদনাম’ গাইলাম৷ বহু বছর ননস্টপ হাততালি পেয়েছি এই গান গেয়েই৷ গত বছর বিধাননগরের একটি পুজো প্যান্ডেলে পারফর্ম করার পর, এত দরদের গানেও দেখলাম সব নিরুত্তর৷ খুব কষ্ট পেয়েছিলাম৷” আক্ষেপ কাজল আচার্য্যের৷
[ফিল্মি কায়দায় ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে পালাল কিশোর]
কাজল সেই ১৯৯৪ থেকেই দুর্গাপুরের কিশোরকুমারকণ্ঠী৷ এবার পুজোয় তাঁর কাছে টানা বুকিং৷ পরপর ১২টি সন্ধ্যা৷ ষষ্ঠীর সন্ধ্যা থেকেই স্টেজ কাঁপাবেন কাজল৷ কিন্তু, শুধু আর কিশোর কণ্ঠী হয়ে কাঁপানো যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে স্বয়ং কাজলেরই৷ তার কথায়, “এখন আবার অরিজিত সিং মিকা সিংয়ের গানেরও রিহার্সাল করতে হচ্ছে৷ যা স্বপ্নেও ভাবিনি৷” এখন আর শুধুমাত্র কিশোরকুমারকে বিক্রি করা যাচ্ছে না৷ তবুও গাইছেন, কারণ স্টেজ শো তাঁর প্যাশন৷ ১৯৯৪ ইস্পাতনগরীর একটি পুজো প্যান্ডেলের সন্ধ্যায় কাজলের গলায় ‘চেয়েছি যারে আমি’ শুনে তাক লেগেছিল, সেখানেই এখন শ্রোতার চাহিদা একটু অন্যরকম৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.