সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: ফেরাতে হাল, দিল্লির জেএনইউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরেছে লাল। আর সেই লাল নিশান ধরা মুষ্টিবদ্ধ হাতগুলো যাঁর নেতৃত্বে এতটা শক্তিশালী, সেই নেত্রী কিন্তু বাংলার সাহসী কন্যা। ঐশী ঘোষ। দুর্গাপুরের মায়াবাজার ডিটিপিএস কলোনির বাসিন্দা ঐশীই এখন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থী সংগঠন আইসা নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংসদের সভানেত্রী। তাঁর নেতৃত্বেই আগামী দিনে কেন্দ্রবিরোধী লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হবে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন।
দুর্গাপুর থেকে দিল্লি, ঐশীর এই লম্বা সফরের দিকে চোখ রাখলে কিন্তু বহু বিষয় নজরে আসে। দুর্গাপুরে স্কুল শিক্ষা শেষ করে দিল্লিতে দৌলত রাম কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়শোনা। তারপর ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ। ইতিহাস লেখা শুরু সেখান থেকেই। ২০১৭ সাল থেকে পরপর দুবার এসএফআইয়ের হয়ে ছাত্র সংসদের কাউন্সিলর পদে জিতেছিলেন ঐশী। জেতেন এসএফআইয়ের হয়ে। তারপরই এবার সোজা সভাপতি।
বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে ঐশীর এমন আত্মিক সম্পর্ক তৈরির নেপথ্যে অবশ্য বাম মনোভাবাপন্ন পরিবার। বাবা দেবাশিস ঘোষ ডিভিসিতে কাজ করেন। কারখানায় সিটুর যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। মা শর্মিষ্ঠা ঘোষ সাধারণ গৃহবধূ। তাই ছোট থেকেই বাম সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী ঐশী নিজেও প্রভাবিত হয়। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনকে নেতৃত্ব দিয়ে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার এই লড়াই কিন্তু সহজ ছিল না মোটেই। বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ তাঁদের পক্ষে বেশ কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। জয়ের পরও আইনি জটে অনিশ্চিত হয়ে ছিল নতুন ছাত্র সংসদ গঠন। তবে সেসব জট কাটিয়ে বুধবার বিকেলে শপথ নিয়েছেন ঐশী। দেশের রাজধানীতে আরও এক কঠিন লড়াইয়ের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন ঐশী ঘোষ এবং ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক। সকলেই এসএফআই-এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত।
জীবনের এমন এক সাফল্যের সিঁড়িতে পা দেওয়া ঐশীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,“দিল্লিতে পড়তে এসেই বামপন্থীদের আন্দোলন সামনে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তখন থেকেই এসএফআইয়ের সংগঠনের সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়ি। জেএনইউতে বাম সংগঠনগুলি যেভাবে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কাজ করে, তাতে আরও উৎসাহ বাড়ে।”
আগাগোড়া বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী ছাত্রীর হাতে তাবিজ,কবজ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর বিতর্ক তৈরি হলেও, তাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ ঐশী ঘোষ। এনিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়াও বেশ স্পষ্ট। ঐশীর কথায়, “জন্মেই কমিউনিস্ট হইনি। আমিও মানুষ। শিখতে, বুঝতে সময় লাগে। পরিবারের সদস্যরাই এসব পরতে বলেছিলেন। খুব ছোট ছিলাম তখন। পরে সব বুঝতে শিখলাম। বহুদিন এইসব আর আমার হাতে নেই।” গেরুয়া শিবিরকে সামলে কীভাবে এগোবে? এই প্রশ্নে তাঁর সাবালীল উত্তর, “অন্তত আগামী চার বছর এরা থাকবে। যেহেতু সরকারে বিজেপি। আমাদের জোরদার আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে থাকতে হবে।”
এমন সাফল্যের জন্য এরাজ্যের এসএফআই নেতৃত্বের তরফেও শুভেচ্ছা পেয়েছেন ঐশী। তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারিও। এই প্রসঙ্গে ঐশী বলেন, “ওনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু বাংলায় বিরোধী ছাত্র সংগঠন ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। উনি যদি এই ব্যাপারে দলকে আরও গণতান্ত্রিক হওয়ার পরমার্শ দেন তবে ভালো হয়।” এই রাজ্যে বামপন্থীদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ঐশী বলছেন, “আগামী দিনে ভাল হবেই। সাধারণ মানুষের মাঝে গিয়ে কাজ করে তাঁদের ভালবাসা অর্জন করতে হবে।”
আগামী সময়ে জেএনইউতে চব্বিশ ঘন্টার চিকিৎসা কেন্দ্র চালু, হস্টেল সমস্যার সমাধান-সহ একাধিক কাজের তালিকাও তৈরি করেফেলেছেন নতুন সভানেত্রী। পুজোর আগে, আগামী ৩ অক্টোবর দুর্গাপুরে নিজের বাড়িতে আসছেন ঐশী ঘোষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.