পলাশ পাত্র, তেহট্ট: চোরেরা পগারপার। রেখে গেছে বাহন। সেই বাহন নিয়েই দড়ি টানাটানি, থুড়ি, ঘোড়া টানাটানি বনদপ্তর, প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের মধ্যে। কাঠচোরের ফেলে যাওয়া ঘোড়ার ভবিষ্যৎ ঠিক করতে মাথা গলাতে হল আদালতকে। ঘটনা কৃষ্ণনগরের মহৎপুর জঙ্গলের। ৪ মাস ধরে টানাটানির পর আপাতত ঘোড়ার ঠাঁই হয়েছে কৃষ্ণনগর বনদপ্তরের কার্যালয়ের পিছনে।
কাহিনীর সূত্রপাত মাস চারেক আগের। গাড়িতে ঘোড়া জুতে প্রায় রাজকীয় কায়দায় রাতের আঁধারে চাপড়ার মহৎপুর ফরেস্টে ঢুকেছিল একদল চোরাকারবারি। গাছ কেটে বহুমূল্য কাঠ পাচার ছিল লক্ষ্য। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বনদপ্তরের কর্তারা হানা দিয়েছিলেন। তা টের পেয়েই সতর্ক হয়ে যায় চোরের দল। শেষে বিপদ বুঝে ঘোড়া, গাড়ি, কাঠ সব ফেলে পালায়। মালিকহীন হয়ে পড়ে ঘোড়ার দল। আর বিপত্তি বাঁধল তা নিয়েই। এই চোরের দলের ৪টি ঘোড়ার দায়িত্ব কে নেবে, সেই নিয়ে তৈরি হয় টানাপোড়েন। জঙ্গলে চোরাকারবার বিরোধী অভিযানের দায়িত্ব বন দপ্তরের। আবার পশুর দেখভাল প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের কাজের মধ্যে পড়ে। সুতরাং, চোরেদের ঘোড়া নিয়ে টানাটানি বনদপ্তর আর প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের মধ্যে।
[পেট্রাপোল সীমান্তে উদ্ধার ১৪টি সোনার বিস্কুট, ধৃত পাচারকারী]
এহেন গুরুতর সমস্যার সমাধান খুঁজতে শেষমেশ কৃষ্ণনগর সিজেএম আদালতের দ্বারস্থ হন দুই দপ্তরের কর্তারা। জজ সাহেবের পরামর্শমতো, আপাতত ঘোড়াদের দায়িত্ব বর্তায় বনদপ্তরের উপরই। কৃষ্ণনগর ফরেস্ট অফিসের পেছনে খুঁটিতে বাঁধা কাঠচোরদের ৪টি ঘোড়া। নিয়ম করে প্রতিদিন তিনবার তাদের খেতে দেওয়া হয়। ছোলা, বিচুলি, খড়কুটো, ঘাস – ভরপুর খাবার। দিনে প্রায় ৪ কেজি ছোলা, ১২ কেজি খড় ও বিচুলি কিনতে হয়। ৪ ঘোড়ার খাওয়া খরচ বাবদ প্রতিদিন সরকারি কোষাগার থেকে খরচ হচ্ছে ৪০০ টাকা। বিরক্তি বাড়ছে বনদপ্তরের কর্মীদের। তাঁদের অভিযোগ, একেই তাঁরা সংখ্যায় কম, হাতে হাজার কাজ। তারওপর বাড়তি জুটেছে এই ঘোড়াগুলির দেখভাল। তার জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম তো করতেই হচ্ছে। ঘোড়া নিয়ে মালিকের কোনও মাথাব্যথা নেই। চার মাসে কেউ খোঁজও করেনি। ফলে হাত, পা বাঁধা পুলিশ, আদালত, আইনের।
ঘোড়ার দায়িত্ব নিয়ে একে অন্যের কোর্টে বল ঠেলছে বন এবং প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তর।নদিয়া-মুর্শিদাবাদ রেঞ্জের আধিকারিক রানা দত্ত বলেন, ‘ঘোড়া উদ্ধারের পর বনদপ্তরের তরফে পুলিশে অভিযোগ করা হয়। নোটিসও দেওয়া হয়। কিন্তু মালিকের কোনও খোঁজ মেলেনি এখনও। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের তৎকালীন আধিকারিক মিলন সরকারের সাফাই, তাঁকে মেল করে বনদপ্তর থেকে ঘোড়া হস্তান্তরের বিষয়টি জানানো হয়। তিনি চিঠি লিখে জানিয়ে দেন, তাঁর অফিসে ঘোড়া রাখার মতো জায়গা নেই। এদিকে নাগাল নেই কাঠচোরেদেরও। বোঝাই যাচ্ছে, চোর অপেক্ষা চোরের বাহনই এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.