সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: সিপিএম নেতার কীর্তি! মায়ের শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে সরকারি ত্রিপল দিয়ে প্যান্ডেল। বাম আমলে প্রাক্তন বাম বিধায়কের হাত ধরে দুর্গাপুর নগর নিগমে চাকরি পাওয়া অভিযুক্ত সিপিএম নেতা শুভ দত্ত এখন ৪ নম্বর বরো অফিসের এক কর্মী। সম্প্রতি সিপিএমের পার্টি সদস্য থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হলেও সিপিএমের পশ্চিম ২ এরিয়া কমিটি অফিসে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে এখনও। বাম আমলে শুভ দত্তের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ছিল। এমনকি ঠিকাদারদের উপর ‘দাদাগিরি’রও অভিযোগ রয়েছে। সে নাকি এখন পার্টির তহবিলের দেখভালের দায়িত্বে আছেন। এই ‘গুণধর’ সিপিএম নেতা বিশ্ব বাংলার লোগো লাগানো ত্রিপল যা কিনা পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল দুর্গত অসহায় মানুষের কাছে, তা দিয়ে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে হল ওই নেতার মায়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল। তদন্তের দাবি শাসকের। একযোগে সুর চড়াল বিরোধীরা।
মায়ের শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে বিশ্ব বাংলার লোগো লাগানো সরকারি ত্রিপল দিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করে বিতর্কে জড়ালেন দুর্গাপুর নগর নিগমের ৪ নম্বর বোরো অফিসের কর্মী শুভ দত্ত। দিনকয়েক আগে দুর্গাপুর নগর নিগমের ৪ নম্বর বরো অফিসের কর্মী শুভ দত্তের মায়ের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার মায়ের শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে বিশ্ব বাংলার লোগো লাগানো সরকারি ত্রিপল দিয়ে প্যান্ডেল করে বিতর্কে এই কর্মী। বুধবার ওই প্যান্ডেল খুলতে গেলে নজরে আসে বিষয়টি। কোথায় পেলেন এই সরকারি ত্রিপল? উত্তর দিতে গিয়ে কার্যত পালিয়ে বাঁচলেন দুর্গাপুর নগর ৪ নম্বর বোরো অফিসের কর্মী শুভ দত্ত। বাঁচতে দায় চাপালেন ডেকরেটরের ওপর। বললেন, “আমি জানি না। প্যান্ডেল ডেকরেটের করেছে। ওরা বলতে পারবে।” আর দুর্গাপুর নগর নিগমের এই কর্মচারীর অভিযোগ শুনে ডেকরেটর কর্মী সাফ জানান, “এই সরকারি ত্রিপল বাড়ির মালিক অর্থাৎ শুভবাবুই দিয়েছেন।”
যে সরকারি ত্রিপল অসহায় দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল সেই ত্রিপল কিনা লাগানো হল শ্রাদ্ধের প্যান্ডেলে। এটা অত্যন্ত অন্যায় হয়েছে বলে দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসকমণ্ডলীর ভাইস চেয়ারপার্সন অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান,”আমি এখনই তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছি। অভিযোগ সঠিক হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তদন্তের আশ্বাস দেন দুর্গাপুর নগর নিগমের কমিশনার আবুল কালাম আজাদ ইসলামও। দলের সক্রিয় কর্মীর এহেন আচরণে বিড়ম্বনায় সিপিএম। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ দাস জানান, “বিষয়টি আমার জানা নেই। না জেনে কোনো মন্তব্য করব না।” দল এই অন্যায়ের তদন্ত চাইবে বলে তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “ওই ব্যক্তিকে নগর নিগমে চাকরি দিয়েছিল সিপিএম। পরে স্থায়ীও করে দেয়। আমার মনে হয় দুর্গতদের জন্যে রাখা ত্রিপল চুরি করেছে। আমি নিগমের চেয়ারপার্সন অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়কে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে অনুরোধ করব। এটাই সিপিএম। রাতে চুরি করে সকালে সেই চুরির দায় চাপায় তৃণমূলের উপর।”
এই বিষয়ে বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই বলেন,” সিপিএম চুরির জন্মদাতা। আর তৃণমূল এই বিষয়ে সিপিএমের যোগ্য উত্তরসূরি।” দুপুরেই দুর্গাপুর নগর নিগম শোকজ করে অভিযুক্ত শুভ দত্তকে। এই বিষয়ে দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “ঘোরতর অন্যায় কাজ করেছেন ওই কর্মী। তাঁকে শোকজ করা হয়েছে। আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সিপিএমের পশ্চিম ২ এরিয়া কমিটির সম্পাদক প্রভাস সাঁই-ও এই কাজের বিরোধিতা করেন। বলেন, ” উনি দলের সদস্য নন। আর ওটা পার্টি অফিস নয়। ট্রাস্টের অফিস। সবাই আসতে পারেন। তবে উনি দলের সমর্থক হতে পারেন সক্রিয় সদস্য নন। তাও আমরা অভিযোগ খতিয়ে দেখব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.