নব্যেন্দু হাজরা: সকাল-বিকেল নয়। রাজ্যে ঘটা দুর্ঘটনার বেশিরভাগটাই ঘটে সন্ধে থেকে রাতের মধ্যে। অফিস-কাছারি বা ব্যবসা বন্ধ করে মানুষের বাড়ি ফেরার সময়। পরিবহণ দপ্তরসূত্রে খবর, তথ্য বলছে ২০২৩ সালে মোট দুর্ঘটনার ৩০ শতাংশই ঘটেছে সন্ধে ৬টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে। ২০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে বিকেল ৩টে থেকে সন্ধে ৬টার মধ্যে। সকালের দিকে দুর্ঘটনার হার সবচাইতে কম।
পথদুর্ঘটনার হার কমাতে সম্প্রতি রোড সেফটি পলিসি এনেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। আইআইটি খড়গপুরের সাহায্য নিয়ে তার উপর একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আসলে সন্ধের সময় মানুষের অফিস-কাছারি সেরে বাড়ি ফেরার সময়। তখন একদিকে যেমন মানুষের শরীরে ক্লান্তি থাকে। নানা চিন্তা ঘোরে তাঁর মাথায়। সেই স্ট্রেস থেকেই অমনোযোগী হয়ে যান তিনি। একইসঙ্গে থাকে বাড়ি ফেরার তাড়াও। পাশাপাশি যিনি ড্রাইভ করে ফেরেন, তিনিও গাড়ি ছোটান জোরে। আর তাতেই ঘটে দুর্ঘটনা। সকালের দিকে মানুষের মাথা থাকে চিন্তামুক্ত। ফলে সতর্ক হয়ে চলাফেরা করেন তাঁরাও। চালকও গাড়ি ছোটান গতি মেপেই। যে কারণে এই সময় দুর্ঘটনার বহর অনেকটাই কম। একইসঙ্গে দেখা যাচ্ছে, ঝড়-বৃষ্টি বা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার চাইতে যেদিন আকাশ পরিষ্কার থাকে সেদিনই ঘটে সবথেকে বেশি দুর্ঘটনা। এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, গতবছর ৩১৮২টি দুর্ঘটনার মধ্যে ১৯৫৮টিই হয়েছে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে। পরিবহণ দপ্তরের এক কর্তার কথায়, আসলে ঝড়বৃষ্টির সময় দুর্ঘটনা ঘটার ভয়ে যে কোনও মানুষই গাড়ি আস্তে চালান। গাড়ির গতি থাকে কমের দিকে। কিন্তু রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে বা আকাশ যেদিন পরিষ্কার থাকে, সেদিন চালক গাড়ি ছোটান জোরে। অনেক সময়ই নিয়ন্ত্রণ হারান চালক। তাতেই ঘটে দুর্ঘটনা।
শুধু তাই নয়, চমকে দেওয়ার মতো তথ্যে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে গত এক বছরে সবথেকে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ফাঁকা রাস্তায়। কারণ জেলার রাস্তায়, রাজ্য সড়ক বা জাতীয় সড়কে রাস্তা ফাঁকা থাকলে গাড়ির গতি থাকে তুঙ্গে। চালকও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তখনই ঘটে যায় বিপত্তি। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, সবথেকে কম দুর্ঘটনা স্কুল-কলেজের সামনে ঘটেছে। যেখানে ফাঁকা রাস্তায় দুর্ঘটনা হয়েছে ২১৭৪টি, সেখানে স্কুলের সামনে হয়েছে ১৩৮টি দুর্ঘটনা এবং কলেজের সামনে ৩১টি। অর্থাৎ মানুষ সাবধানে গাড়ি চালানোয় স্কুল-কলেজের সামনে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেকটাই কম হয়। পরিবহণ দপ্তরের এক কর্তার কথায়, আমরা এই তথ্যগুলো জোগাড় করেছি। কোন রাস্তায় কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তারও এক পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.