পলাশ পাত্র, তেহট্ট: বছর তিনেক আগেই স্নায়বিক কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল ছেলের। চিকিৎসা করিয়েও ফল মিলছিল না। উপায়ান্তর খুঁজে না পেয়ে গ্রামের লোকেদের পরামর্শে গুনিনের দ্বারস্থ হন বাবা-মা। কিন্তু ফল মেলা দূর-অস্ত, বরং এক ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে মৃত্যু হল অন্য ছেলের। তারপর হুঁশ ফিরল দম্পতির। যদিও গোটা বিষয়টি জানিয়ে ওই দম্পতি পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পর অভিযুক্ত গুনিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার নাকাশিপাড়ায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার নাংলা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় কৃষক হলধর শেখ ও তার স্ত্রী আলফিনা বিবি। তাঁদের ছোটো ছেলে দীর্ঘদিন ধরেই মৃগী রোগে আক্রান্ত। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরও কোনও ফল মেলেনি। এরপর প্রতিবেশীদের কথা শুনে ছোটো ছেলে জাহাঙ্গির শেখকে বেথুয়াডহরির কাঁঠালবেরিয়া গ্রামের বাসিন্দা আলপনা বিবি নামে এক গুনিনের কাছে যান আলফিনা বিবি। অভিযোগ, সাড়ে দশ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই শিশুটিকে সুস্থ করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন আলপনা নামে ওই গুনিন। তার কথায় রাজি হওয়ায় জাহাঙ্গির ও তার মাকে রেখে গরম তেল, গাওয়া ঘি এবং লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে চিকিৎসা শুরু করে ওই গুনিন। এরপর ওই গুনিন জানায় ওই মহিলার গোটা পরিবারের উপরই অশরীরী ভর করেছে। পরে ওই মহিলা মেজো ছেলে জাহ্নবী শেখকে নিয়ে যায় ওই মহিলার কাছে। তখন তাকে আটকে যাগযজ্ঞ শুরু করে আলপনা।
শুক্রবার সকালে পরিবারের সদস্যরা ওই গুনিনের কাছে গেলে সে জাহ্নবীকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলে। দাবি মতো টাকাও চায় সে। এরপর কোনওক্রমে জাহ্নবীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন মৃত শিশুর মা আলফিনা বিবির কথায়, “আমি ভেবেছিলাম ছেলে অজ্ঞান হয়ে রয়েছে। ভেবেছিলাম বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর হয়তো জ্ঞান ফিরবে। গ্রামবাসীরা ওর চেহারা দেখে মায় বলে সে অনেক আগেই মারা গিয়েছে তখন নাকাশিপাড়া থানায় খবর পাঠাই। খবর পেয়ে গ্রামে আসে পুলিশ। এরপর ওই গুনিনতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে ওই শিশুর পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের অভিযোগ, যাগযজ্ঞের নামে শিশুটিকে আগুনে ঠেলে দিয়েছিল ওই গুনিন। সেই কারণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে শিশুর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.