ছবি: অমিতলাল সিংদেও।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: স্বপ্নাদেশে থানার মুসলিম ওসির শুরু করা পুজোয় বছরভর মায়ের গয়না থাকে থানার লকারে। কালীপুজোর (Kali Puja 2023) আগের রাতে সেই গয়না থানা থেকে নিয়ে এসে পুজোর সকাল মায়ের অলংকরণ চলে দুপুর পর্যন্ত। কয়েক বছর ধরে এভাবেই কালীপুজোর দিন সেজে ওঠে পুরুলিয়ার পুঞ্চার চরণপাহাড়ি কালী।
এই পুজো এবার ৭৩ বছরে পা দিল। বাংলা ১৩৫৭ সালে পুঞ্চা থানার তৎকালীন ওসি জিটি লতিফ স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। স্বপ্নে মা কালী তাঁকে জানান, পাশের পাহাড়ে চরণ চিহ্ন রয়েছে। স্বপ্নে পুজো করার নির্দেশ দেন। পরদিন ওই পুলিশ আধিকারিক সামনের পাহাড় চূড়ায় গিয়ে একটি পাথরের উপর দেবীর পদচিহ্ন দেখতে পান। এরপরই শুরু হয় মায়ের আরাধনা। ছোট মন্দির থেকে আজ বড় মন্দির হয়েছে। মা এখানে ‘চরণপাহাড়ি কালী’ নামে পরিচিত। এই পুজোকে ঘিরে মা চরণপাহাড়ি কালীমন্দির নামে একটি কমিটি রয়েছে। এই কমিটির তত্ত্বাবধানে পুজো চলে। এছাড়া ১২ জন সেবাইত রয়েছেন। যারা নিত্য পুজোর খরচ চালান। এছাড়াও আরও ১২টি পরিবার রয়েছে যারা কার্তিকের অমাবস্যার পুজোর খরচ দেন। বাকি সবকিছুই চাঁদা আদায় করে ওই কমিটি করে থাকে। সেই কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা তথা মায়ের অলংকরণ করা অসীম মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই পাহাড়ের নাম আগে চরণপাহাড়ি ছিল না। মায়ের পদচিহ্ন থানার এক ওসি স্বপ্নাদেশে দেখার পরেই এই নাম হয়। ব্রিটিশ আমলে এই পাহাড়ে ছিল ওয়াচ টাওয়ার।”
রবিবার মায়ের নিত্য পুজো হওয়ার পর ঘট বিসর্জন হবে। সকাল আটটা থেকে অলংকরনের কাজ শুরু। চলবে দুপুর দুটো পর্যন্ত। পাথরের এই মূর্তিতে রঙ হওয়ার পর ডাকের সাজে সেজে উঠবেন মা। সেইসঙ্গে সোনা-রুপোর গয়না পরানো হবে। এরপর রাতে পুজো শুরুর আগে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে মায়ের। তারপর সংকল্প হওয়ার পর শুরু হবে পুজো।
আগে অবশ্য এখানে মাটির প্রতিমায় পুজো হতো। পুজো সূচনার প্রায় বছর ১৫ পর এই এলাকার বাসিন্দা সুধীর মুখোপাধ্যায়, দক্ষিণারঞ্জন হালদার ও গৌরাঙ্গ হালদার কলকাতার বড়বাজার থেকে মায়ের এই পাথরের মূর্তি নিয়ে আসেন।
কালীপুজোর রাতে পুজো শেষে ষোলো আনা কমিটির পাঁঠা বলি হওয়ার পর একের পর এক বলি চলতে থাকে। শেষ হয় প্রায় ভোররাতে। কালীপুজোর রাতেই ১০০-র বেশি বলি হয়। ষোলো আনার বলি হওয়ার পরই তা রান্না করে ভাত, তরকারির সঙ্গে মাকে ভোগ দেওয়া হয়। এরপর পুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকা সকলেই পাত পেড়ে খান। এছাড়া কালীপুজোর পরের দিন নর-নারায়ন সেবা হয়। সেখানে পাত পড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের। সম্প্রীতির আবহে থাকা এই পুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে পুঞ্চা থানার পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.