শুভঙ্কর বসু: শুনশান ঘন জঙ্গলে বিপদসংকুল পথ ধরে এগিয়ে চলেছেন একদল ভোটকর্মী। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে সামনেই প্রিসাইডিং অফিসার। কালাশনিকভ হাতে তাঁদের আড়াল করে নিরাপত্তারক্ষীর দল। গন্তব্য, মাওবাদী (Maoist) অধ্যুষিত একটি ভোটকেন্দ্র। যেখানে না আছে ভোটদাতা, না আছে ভোটকেন্দ্র তৈরির ন্যূনতম রসদ। যোগাযোগের একমাত্র ভরসা স্যাটেলাইট ফোন (Satelite Phone)!
টেলি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দণ্ডকারণ্যের এমন ভোটকেন্দ্রে ভোট করার ছবি একাধিকবার চলচ্চিত্রে ধরা পড়েছে। কিন্তু বাস্তবের ডিজিটাল ভারতে এখনও কি পরিস্থিতি এমনই? না, ২০২১-এর নির্বাচনে (WB Assembly Polls) প্রথমবারের জন্য চিত্রটা বদলে যাচ্ছে। এবার রাজ্যে কার্যত নেই কোনও ‘শ্যাডো জোন’। টেলি পরিভাষায় ‘শ্যাডো জোনে’র অর্থ হল যেখানে টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও আবছায়া হয়েই রয়েছে। পুলিশ বা সরকারি আধিকারিকদের যোগাযোগের ভরসা একমাত্র স্যাটেলাইট ফোন। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, এবারের নির্বাচনে ‘শ্যাডো জোনে’র সংখ্যা হাতে গোনা। এবং সেসব এলাকাতেও অস্থায়ী টেলি যোগাযোগের ব্যবস্থা রেখে ভোট করানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
রাজ্যের সিইও আরিজ আফতাব জানিয়েছেন, “টেলি সার্ভিস পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে এ ব্যাপারে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে। এবার অসুবিধা হবে না।” ‘শ্যাডো জোন’ মূলত দু’ধরনের – ‘ইন্টারনেট শ্যাডো জোন’ ও ভয়েস ‘শ্যাডো জোন’। ‘ইন্টারনেট শ্যাডো জোনে’ কোনও পরিষেবা মেলে না। ‘ভয়েস শ্যাডো জোন’ মানে যেখানে কোনও ধরনের টেলি পরিষেবাই নেই। গত লোকসভা নির্বাচনেও রাজ্যে ছিল প্রায় দু’হাজার ‘ইন্টারনেট শ্যাডো জোন’ এবং দেড় হাজার ‘ভয়েস শ্যাডো জোন’। এবার সেই সংখ্যা অনেকটাই নেমে এসেছে। এবার জঙ্গলমহলের তিন জেলা, দুই ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকা এবং পাহাড়ে সব মিলিয়ে ‘ভয়েস শ্যাডো জোনের সংখ্যা’ সাড়ে সাতশোর কাছাকাছি। ইন্টারনেট ‘শ্যাডো জোনের সংখ্যা’ প্রায় ১৬০০।
কিন্তু এসব এলাকাগুলিতে এবার অস্থায়ী টেলি যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে বলে সিইও অফিস সূত্রের খবর। রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরের এক কর্তার কথায়, ‘‘শুধু এই ভোটের আগে নয়। গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই এ নিয়ে টেলি সার্ভিস প্রোভাইডারদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা চলেছে।” কেন শ্যাডো জোন কাটাতে তৎপর কমিশন কর্তারা? কারণ, সময় যত এগোচ্ছে ভোট প্রক্রিয়াও ততই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছে। কোন সময়ে কত ভোট পড়ছে, টেক্সট মেসেজের মাধ্যমেই তা পৌঁছে যায় দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের কাছে। আবার বুথে কেমন ভোট চলছে, তা দেখার জন্য ওয়েব কাস্টিং ভরসা। আবার সেক্টর অফিসাররা আদৌ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেন কি না তা এবার ‘গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম’ বা জিপিএসের মাধ্যমে খতিয়ে দেখবেন আধিকারিকরা। আর এসবের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রয়োজন। না হলে সব আয়োজনই বৃথা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.