সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: এনআরএস কাণ্ডের জেরে চিকিৎসক ধর্মঘটে যখন রাজ্যজুড়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে, তখনও নীরবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন রাজ্যের গ্রামীণ চিকিৎসকরা। সর্বত্র চিকিৎসা পরিষেবা মসৃণ রাখতে চিকিৎসকদের আবেদন জানিয়েছেন রুরাল মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার অ্যাসোসিয়েশনের সহ সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব মল্লিক।তাঁর কথায়, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে বিনা পয়সায় চিকিৎসা পরিষেবা দিতে হবে। আর এই মানবিক আবেদনই এই দুঃসময়েও আশার আলো জ্বালিয়ে রাখছে৷
জানা গিয়েছে, হাওড়া ও হুগলি জেলা-সহ রাজ্যের ২২টি জেলার চিকিৎসক সংগঠন তাঁদের চিকিৎসা পরিষেবা অব্যাহত রেখেছেন। চেম্বারে রোগী দেখার পাশাপাশি বহু ক্ষেত্রেই রোগীর বাড়িতে গিয়েও চিকিৎসা করছেন তাঁরা। তবে এনআরএস হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের উপর হামলার ঘটনাকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করেছেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, সকলে আন্দোলন করলে দুঃস্থ মানুষদের কী হবে?
রুরাল মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব মল্লিক বলেন, ‘‘যাঁরা দিনরাত মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন, তাঁদের উপর এই আক্রমণকে কখনওই সমর্থন করা যায় না। কিন্তু, বহু মানুষ চিকিৎসকদের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন, তাঁদের অবহেলা করাও সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের ধর্মঘটের ঘটনায় রোগীর আত্মীয়রা আতঙ্কে রয়েছে। রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে সংকোচ বোধ করছেন তাঁরা। তাঁদের ভয়, গাড়ি ভাড়া করে হাসপাতালে যাওয়ার পর যদি ফিরে আসতে হয়? সেক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি রোগীর শারীরিক অবস্থারও অবনতি হবে। তাই হাসপাতালে যেতে চাইছেন না অনেকেই।’’
বিপ্লববাবু কথায়, এই পেশায় সমস্যা আসবেই। লড়াই, সংগ্রাম, আন্দোলনও থাকবে। কিন্তু আন্দোলনের জন্য গ্রামের মানুষদের চিকিৎসার অভাবে মরতে দেওয়া যাবে না। বর্তমানে ১১ হাজার মানুষ পিছু মাত্র একজন অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক রয়েছেন। ৫৫,৫৯১ জন মানুষ পিছু মাত্র একটি সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। ১,৮৪৪ জন রোগীর জন্য সরকারি হাসপাতালে বরাদ্দ আছে মাত্র একটি শয্যা। সারা দেশে পাস করা স্বীকৃত ডাক্তারের সংখ্যা মাত্র ১০ লক্ষ। সেখানে গ্রামীণ চিকিৎসকের সংখ্যা ৩০ লক্ষ। এসব ভেবেই এই সিদ্ধান্তে গ্রামীণ চিকিৎসকরা। তাঁদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মন্ত্রী নির্মল মাঝি। সেইসঙ্গে পরিস্থিতি শান্ত হলে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে এই চিকিৎসকদের সরকারি হাসপাতালে সহকারী হিসেবে নিয়োগ করার আশ্বাসও দেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.