রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, আলিপুরদুয়ার: রাজ্যে প্রথম নির্বাচনী সভা থেকেই নাগরিকপঞ্জি নিয়ে ফের কড়া বার্তা দিয়ে গেলেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷ সীমান্ত শহর আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলাতেও এনআরসি চালু হবে৷ অনুপ্রবেশকারীদের বেছে বেছে তাড়িয়ে দেওয়া হবে রাজ্য থেকে৷ তবে হিন্দু শরণার্থীরা নিরাপদে এখানে আশ্রয় পাবেন৷’ আগেও রাজ্যে সভা করতে এসে বিজেপি সভাপতি এনআরসি করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন৷ তবে নির্বাচনী প্রচারে এসে তা ঘোষণা করা অন্য মাত্রা পাচ্ছে৷ তৃণমূলের বিরোধিতায় এনআরসি-কে নির্বাচনী হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি, তা স্পষ্ট৷
শুক্রবার থেকেই এরাজ্যে নির্বাচনী প্রচার শুরু করল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব৷ আলিপুরদুয়ারে প্রথম সভা করতে এসেই অমিত শাহ সুর চড়ালেন রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে৷ সমূলে তৃণমূলকে উৎখাত করার ডাক দিলেন৷ অমিত শাহর বক্তব্য, ‘২০১৯-এর ভোট খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ এই ভোটই ঠিক করে দেবে, আগামী ৫ বছর দেশের গতি কোনদিকে যাবে৷ এই ভোটের উপর নির্ভর করছে পরবর্তী ৫ বছর সুরক্ষা, উন্নয়ন, কাজ – এসব কীভাবে হবে৷’ তৃণমূলের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিজেপি সভাপতি আগের কথাই পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘বাংলার পবিত্র মাটিতে আগে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর শোনা যেত৷ এখন শোনা যায় গুলি, বোমার শব্দ৷ এখানকার ঐতিহ্য, সংস্কৃতিতে নষ্ট করে দিচ্ছে তৃণমূল সরকার৷ হাওড়া থেকে আলিপুরদুয়ার, যেখানেই যাওয়া হোক একটাই নাম শোনা যাচ্ছে – বিজেপি৷’
তৃণমূলের আমলে বাংলায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে, অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘আলিপুরদুয়ারের মানুষ বুঝুন, তাঁরা কার সঙ্গে থাকবেন? মোদি না মমতা৷’ পাশাপাশি আলিপুরদুয়ারের গোর্খা অধ্যুষিত এলাকায় জনজাতির মন পেতে চেষ্টার কসুর করেননি অমিত শাহ৷ গোর্খাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর দাবি, ‘গোর্খাদের জন্য তেমন কিছুই করেনি তৃণমূল সরকার৷ বিজেপি ক্ষমতায় এলে, পাথরের মতো শক্তিশালী হয়ে গোর্খাদের পাশে দাঁড়াবে৷’
এদিনের সভা থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোষামোদের রাজনীতি, তোলাবাজির অভিযোগ তুলেছেন অমিত শাহ৷ তাঁর কথায়, ‘ইমামভাতা চালু করা হয়েছে রাজ্যে৷ তাহলে পুরোহিতদের জন্য কেন এধরনের ভাতা চালু করা হল না? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোষামোদের রাজনীতি করছে৷’ তৃণমূল ‘তোলাবাজি ট্যাক্স’ চালু করছেন বলেও কটাক্ষ করে অমিত শাহর মন্তব্য, কলেজে ভরতি থেকে বিধবা ভাতা বা যে কোনও কাজ করতে হলে আগে টাকা দিতে হয় দলের নেতাদের৷ সবমিলিয়ে, ঘটা করে এরাজ্যে নির্বাচনী প্রচার সূচনার কথা বললেও অমিত শাহ’র বক্তব্যে নতুন কিছু প্রায় নেই বললেই চলে৷ এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় সংগঠনকে তিনি চাঙ্গা করতে পারলেও, ভোটবাক্সে তার কতটা প্রভাব ফেলবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷ শুক্রবার দুপুর দেড়টার কিছু পরে আলিপুরদুয়ারের ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে নামে তাঁর হেলিকপ্টার৷ সভা ঘিরে নিরাপত্তাবেষ্টনী আঁটসাঁট থাকলেও, ভিড় তেমন চোখে পড়েনি৷ মঞ্চের সামনের সারির চেয়ারে দেখা গেল মহিলা সমর্থকদের৷ তবে প্যারেড গ্রাউন্ডের অধিকাংশ জায়গাই ছিল ফাঁকা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.