দীপঙ্কর মণ্ডল: বাড়িতে কলের ট্যাপ বন্ধ করা। অযথা জল নষ্ট না করা। স্কুল ব্যাগে করে বয়ে নিয়ে যাওয়া বোতলের জলটুকুও নষ্ট না করার শিক্ষা পাবে শিশুরা। পশ্চিমবঙ্গ সরকার চাইছে ছোটবেলা থেকেই জল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা শেখানো হোক। আর এই উদ্দেশ্যে শিশুপাঠ্যে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।
গোটা দেশেই বিশুদ্ধ পানীয় জলের হাহাকার। কৃষিতেও সমস্যা। বহু এলাকায় শুধু বর্ষাকালেই চাষ হয়। রাজ্যে ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পে কিছুটা সুরাহা হলেও ‘জলসংকট’ মেটেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জল বাঁচাও জীবন বাঁচাও’ কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে এবার স্কুলপাঠ্যে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। তৃতীয় শ্রেণির সিলেবাসে ‘জল সংরক্ষণ’ বিষয়টি থাকবে। স্কুলে আনা উদ্বৃত্ত পানীয় জল অনেক পড়ুয়াই ফেলে দেয়। তা না করার কথা শেখানো হবে। আর্সেনিকের ছোবলে ভুগতে হয় প্রচুর মানুষকে। বছরে অন্তত একবার পরীক্ষাগারে পানীয় জল পরীক্ষা করার শিক্ষা দেওয়া হবে ছাত্রছাত্রীদের। সরকারি কর্তারা মনে করছেন, ছেলেমেয়েদের মাধ্যমে অভিভাবকরা বেশি করে সচেতন হবেন। জল পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকছে পাঠ্যে। আরও বেশি করে জোর দেওয়া হচ্ছে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের উপর। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংরক্ষিত বৃষ্টির জলে অন্তত চার মাস চালিয়ে নেওয়া যায়। একশো দিনের কাজে জেলায় জেলায় পুকুর কাটা চলছে। প্রত্যেক বাড়িতে যাতে বৃষ্টির জল ধরে রাখা হয় সেই শিক্ষা দেওয়া হবে স্কুল-স্তরে।
শহর হোক বা গ্রাম, পানীয় জলের অপচয় হয়েই চলেছে। নলবাহিত জলের কল অযথা খোলা থাকছে। মহানগরীর বিভিন্ন গলিতেও এই ছবি দেখা যায়। অযথা পানীয় জল নষ্টের খবর কেন্দ্র এবং রাজ্য, দুই সরকারের কাছেই আছে। দুই তরফেই নানা সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর দ্বিতীয় দফায় এই বিষয়ে বিশেষ জোর দিয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয় কোনও বোর্ডের সিলেবাসে জল সংরক্ষণের বিষয়টি এখনও অন্তর্ভুক্ত হয়নি। রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দপ্তর এই ক্ষেত্রে পথিকৃৎ। ১৯ লাইনের একটি ছড়া শিশুদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রত্যেকদিন ৫০ থেকে ৬০ লিটার জল লাগে। পানীয় হিসাবে ৫ লিটার, শৌচ কাজে ১০-১৫ লিটার, স্নানে ১৫-২০ লিটার, বাসন ধোয়া ও কাপড় কাচায় ৭-১২ লিটার এবং টয়লেটে ফ্ল্যাশ থাকলে বাড়তি ১৫ লিটার জল লাগে। বিকাশ ভবনের এক আধিকারিক এ প্রসঙ্গে বলেন, এই হিসাবের বাইরেও অনেকে জল অপচয় করেন। এই বিষয়ে ‘শর্ট ফিল্ম’ তৈরির কথাও ভাবছে সরকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.