File photo
চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বিস্ফোরক দাবি করলেন গরু পাচার কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হক। বুধবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই (CBI) আদালতে জামিন খারিজ হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে তার বক্তব্য, “আমাকে টিভি চ্যানেলের আধঘন্টা লাইভে বসার সুযোগ দিন, অনেক কিছু বলব।” এর আগে আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে সে বলেছিল, “আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে সিবিআই। আপনাদের ক্ষমতা নেই সেই খবর দেখাবার।” এবার টিভি চ্যানেলে বসে অনেক কিছু ফাঁস করার হুঁশিয়ারি দিলেন।
সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে গরুপাচার চক্রের অন্যতম মূল অভিযুক্ত এনামুল আপাতত জেল হেফাজতে। বুধবার সকালে এনামুলকে আসানসোল জেল থেকে পুলিশের কড়া পাহারায় আসানসোলে বিশেষ সিবিআই আদালতে আনা হয়। মামলার শুনানিতে দিনভর সওয়াল-জবাবের শেষে ফের জামিন খারিজ হয় তার। আরও ৭ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি।
এদিন সিবিআইয়ের তরফে বেশ কিছু তথ্য আদালতের বিচারকের কাছে জমা দেওয়া হয়। সিবিআইয়ের বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে সকাল থেকে এনামুল হকের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু তার জামিনের জন্য জোর সওয়াল করেন। তিনি বলেন, ”আমার মক্কেল সবমিলিয়ে ৮৪ দিন সিবিআইয়ের কন্ট্রাক্টে রয়েছে। যার মধ্যে ৫৫ দিন জেলে রয়েছে। তাকে জেরা করে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ দেওয়ার মতো কোনও তথ্য এখনও সিবিআই আদালতে পেশ করতে পারেনি। এই মামলায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও ২ জনের নামে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। সেই দুজনের নামে অন্য মামলাও রয়েছে। তারা কোথাও কেউ জানেনা। সিবিআই এখনও পর্যন্ত এমন কোন কিছু জোগাড় করতে পারেনি, যাতে প্রমান হয় যে, এনামুল গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তিনি এজলাসে আরও সওয়াল করে বলেন যে, এখানে কোন গরু পাচার বা স্মাগলিং হয়নি। যে গরু পাচারের কথা বলা হচ্ছে, তার কোন ভিত্তি নেই। গরু নিলাম করা হয়েছে। সেইসব গরু তো চাঁদ থেকে আসেনি। রাস্তা দিয়ে নিয়ে আনা হয়েছে। সেইসব গরু উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খন্ড থেকে এসেছে। সেইসব জায়গায় কাউকে এই মামলায় ধরা হয়নি। আমার মনে হচ্ছে, ওইসব রাজ্য অন্য একটা দলের সরকার আছে বলে, সেখানে কিছু করা হচ্ছে না। এই পশ্চিমবঙ্গে অন্য একটা রাজনৈতিক দলের সরকার রয়েছে, তাই এই মামলায় এতো তৎপরতা। এমনটা বলা যায় না যে, সিবিআইয়ের ওপরে চাপ থাকে না।” শেখরবাবু আবেদন করে বলেন, তার মক্কেল তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করছে ও আগামী দিনেও করবে। তাই তাকে যেকোনও শর্তে জামিন দেওয়া হোক।
অন্যদিকে, এনামুল হকের জামিনের বিরোধিতায় সিবিআইয়ের আইনজীবী কালীচরণ মিশ্র ও রাকেশ সিং পালটা সওয়াল করে বিচারককে বলেন, ”আমরা অনেক কাগজ জমা দিয়েছি। এখনই তাকে জামিন দেওয়া হলে, এই মামলার অনেক ক্ষতি হবে। সে যথেষ্টই প্রভাবশালী। সে জামিন পেয়ে বাইরে গেলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করব প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করবে। তাকে ১৪ দিনের জন্য জেলে পাঠানো হোক।” তখন এনামূল হকের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু বলেন, ”তা কি করে হবে? ৫৫ দিন তো জেল হাজতে থাকা হয়ে গেছে। ৬০ দিন তো নির্দিষ্ট রয়েছে।” এরপর বিচারক সিবিআইয়ের জমা দেওয়া তথ্য প্রমাণ খতিয়ে দেখেন। শেষ পর্যন্ত সওয়াল-জবাবের শেষে বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় এনামুল হকের জামিন নাকচ করে ৭ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। বিচারক বলেছেন, আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী দিন শুনানির জন্য ধার্য হয়েছে। সেদিন আবার এনামুল হককে এজলাসে পেশ করা হবে।
এদিকে, এদিন শুনানির পরে বিচারকের নির্দেশ শেষে যখন এনামুল হককে জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিn, তখন পুলিশের ভ্যানে বসে সে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলে, ”আমি নির্দোষ। আমাকে লাইভ করতে দেওয়া হোক। আধ ঘন্টায় সব বলে দেব, আমার কাছে সব তথ্য আছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.