সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: স্বামীর পকেট কেটে পাঁচশো এবং এক হাজার করে হাজার হাজার টাকা ঘরেই সঞ্চয় করে বিপাকে গৃহিণীরা৷ স্বামীর নজর এড়িয়ে রাখা টাকাই এখন চক্ষুলজ্জা সরিয়ে সামনে আনতে হচ্ছে ঘরের বধূদের৷ কালো টাকার উপর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ পাছে প্রভাব পড়ে সংসারের অন্দরে৷ তাই মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতির উদ্দেশে ভাষণের পরেই পরিবারের নজর এড়িয়ে সঞ্চিত হাজার-হাজার কড়কড়ে টাকা সামনে চলে এল৷ যা দেখে চক্ষু চড়ক গাছ গৃহকর্তাদের৷ কারণ, ওই টাকা ব্যাঙ্কে জমা করতে যদি আবার তাদেরই লাইনে দাঁড়াতে হয় তা হলে বড় বিপদ! অফিসের সময়ে তো আর ব্যাঙ্কে টাকা রাখার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানো যায় না৷
মঙ্গলবার রাত থেকেই গৃহস্থের ঘরে-ঘরে এই সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ কোনও বধূ মাটির কূপ ভাঙছেন৷ কেউ আবার বিছানার তলা থেকে অফিস ফেরত স্বামীর হাতে একাধিক পাঁচশো-হাজার টাকার নোট তুলে দিচ্ছেন৷ যা দেখে মেজাজ হারাচ্ছেন গৃহকর্তারা৷ পুরুলিয়া প্রশাসনিক ভবনে কর্মরত এক আধিকারিকের কথায়, “রাত দশটা পর্যন্ত দু’টি ব্যাঙ্কের এটিএমে দাঁড়িয়ে একশো টাকা করে আটশো টাকা বাড়ি নিয়ে আসার পর স্ত্রী পাঁচশো-হাজার টাকা হাতে তুলে দেওয়ায় মেজাজ ঠিক রাখতে পারিনি৷”
এদিকে গোপনে রক্ষিত ধনসম্পত্তি বাইরে আনতে বাধ্য হওয়ার বেশ মনমরা নিম্ন-মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তদের গৃহস্থে স্ত্রীরা৷ শহর পুরুলিয়ার গাড়ি কারখানার শ্রীগুরুপল্লির বধূ জ্যোৎস্না নন্দী বলেন, “পাঁচশো, হাজার টাকা অচল হওয়ায় আমার বহু আশা-ই পূর্ণ হল না৷ হাজার-হাজার টাকা বাধ্য হয়েই স্বামীর হাতে তুলে দিতে হয়েছে৷ এই টাকা বোধহয় আর ফেরত পাব না৷” কারণ, ওই হাজার-হাজার টাকা তো স্বামীর পকেট থেকেই কাটা৷ একই শহরের আমলাপাড়ার বধূ সূজাতা খাঁ, সিন্দার পট্টির রিনা সাও বলেন, “আমরা ঘরের বউরা সংসারের কল্যাণেই পরিবারের নজর এড়িয়ে টাকা আলাদা করে রাখি৷ যাতে পরে কাজে লাগে৷ সকলের অজান্তেই৷ হঠাৎ করে এমন হবে কী করে জানব৷” তাই চোখে-মুখে লজ্জা মেখেই স্বামীর পকেট থেকে কাটা পাঁচশো-এক হাজার টাকার নোট কর্তার হাতেই তুলে দিচ্ছেন সকলে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.