কার্টুন - সুজিত মণ্ডল
ব্রতীন দাস, শিলিগুড়ি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমকের পরই নড়েচড়ে বসল বন দফতর৷ হাতির হামলায় মৃত্যু ও ফসল নষ্ট রুখতে অভিনব উদ্যোগ রাজ্য বন দফতরের৷ এবার আকাশপথে ড্রোনের সাহায্যে ‘বেয়াদপ’ হাতিদের গতিবিধির উপর নজরদারি রাখা হবে৷ আপাতত দক্ষিণবঙ্গে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গল এলাকায় ওই ড্রোন-নজরদারি চালাবে বলে জানিয়েছে বন দফতর৷ পরবর্তী কালে চালু হবে উত্তরবঙ্গের জঙ্গল এলাকাতেও৷
শুধু তাই নয় ড্রোনের সাহায্যে সুন্দরবনেও নজরদারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তবে সেখানে মূলত জলদস্যু ও চোরাশিকারিদের উপর নজর রাখতেই ওই পরিকল্পনা বলে জানিয়েছেন বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন৷ একইসঙ্গে রাজ্যজুড়ে তাণ্ডব চালানো ‘বেয়াদপ’ হাতিদের জন্য ‘পাগলা গারদের’ ধাঁচে এবার তৈরি হচ্ছে পুনর্বাসন কেন্দ্র৷ ডুয়ার্সের বক্সায় আট হেক্টর এলাকাজুড়ে ওই পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷
উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে রাজ্যে ১৮টি ‘খুনে’ ও ‘বেয়াদপ’ হাতিকে চিহ্নিত করেছে বন দফতর৷ ওই হাতিগুলিকে ধরে পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখতে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রকের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন৷ জানুয়ারি থেকে জুন, ছ’মাসে হাতির হানায় জঙ্গলমহলে ১৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন শুনেই মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী৷ বারবার বলা সত্ত্বেও হাতির হানায় মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না কেন, তা নিয়ে বৈঠকে হাজির বনকর্তাদের কাছে কৈফিয়ত চান৷ বন দফতর নিয়ে এনজয় করা যাবে না বলে বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দেন, হাতির হামলায় মৃত্যু কিংবা ফসল নষ্ট হলে শুধু ক্ষতিপূরণ দিয়েই দায়িত্ব মিটে যাবে এমনটা আর হবে না৷ এবার থেকে কোনওরকম গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না৷ মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পরই লোকালয়ে হাতির হানা ঠেকাতে বিশেষ তৎপর হয়ে উঠেছে বন দফতর৷
বুধবার শিলিগুড়িতে রাজ্যের শাখা সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’-য় বৈঠকে যোগ দিতে এসে বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন বলেন, ঝাড়খণ্ডে লাগাতার খনিজ উত্তোলন ও বাংলা-ওড়িশা সীমানায় সেচ ক্যানালের জেরে দলমা থেকে আসা হাতির দল পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরেই প্রায় সারা বছর থেকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ বনমন্ত্রীর৷
এদিন তিনি জানান জঙ্গলমহল এলাকায় ২৫-৩০টি রেসিডেন্সিয়াল হাতি রয়েছে৷ এবার ড্রোনের সাহায্যে গোটা এলাকায় বুনো হাতির গতিবিধির উপর নজর রাখা হবে৷ সুন্দরবনেও ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ এতে কেমন ফল মিলতে পারে, ইতিমধ্যে তার পরীক্ষাও হয়েছে৷ বক্সার জঙ্গলে ‘বেয়াদপ’ হাতিদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত৷ সেখানে হাতির পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে৷ পুনর্বাসন কেন্দ্র ছেড়ে যাতে সহজে ‘বেয়াদপ’ হাতি বেরিয়ে আসতে না পারে, সেজন্য চারপাশে পরিখা খনন করা হবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.