গৌতম ব্রহ্ম: ৪ ঘণ্টার বদলে ২ ঘণ্টা! কমানো হচ্ছে মৃত্যুর শংসাপত্র প্রদানের সময় ব্যবধান। সময়সীমা কমিয়ে আনার পক্ষে ডাক্তারদের যুক্তি, ৪ ঘণ্টার ব্যবধানের বিষয়টি নিয়ে কোনও ডকুমেন্টেশন নেই। এটা একটা অবৈজ্ঞানিক ভাবে চলে আসা ধারণা। যা যুগ যুগ ধরে অন্ধের মতো বয়ে বেড়াচ্ছেন ডাক্তারদের একাংশ।
[ আরও পড়ুন: প্রবল বৃষ্টির জেরে দার্জিলিংয়ে ধস, কাদা চাপা পড়ে মৃত ঘুমন্ত দম্পতি]
স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, চলতি মাসেই এই ব্যাপারে পাকাপাকি নির্দেশ জারি করবে স্বাস্থ্য দপ্তর। অঙ্গদানের ক্ষেত্রে অবশ্য চলতি নিয়মই বলবৎ থাকবে। ভেন্টিলেটরে নেই এমন রোগীর মৃত্যুর ঘোষণাতেও বদল আসতে চলেছে। এই বিষয় নিয়ে রবিবার বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের উদ্যোগে এক আলোচনাসভা হয় রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতে। সেখানে কলেজের অধ্যক্ষ ডা. পার্থপ্রতিম প্রধান জানান, একজন মানুষ মারা গিয়েছে এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আধ ঘণ্টাই যথেষ্ট। চোখের মণিতে আলো ফেললে যদি রিফ্লেকশন না হয়, হৃৎস্পন্দন না পাওয়া যায়, শ্বাসপ্রশ্বাস-প্রক্রিয়া থেমে থাকে তবে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। সন্দেহ হলে ইসিজি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, মৃত্যু ঘোষণা ও শংসাপত্র দেওয়ার মধ্যে ৪ ঘণ্টার ব্যবধানকে নিয়েই কিন্তু এনআরএসে গন্ডগোলের সূত্রপাত। ব্যবধান কম থাকলে হয়তো গন্ডগোল ওই পর্যায়ে পৌঁছতই না। কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে প্রত্যন্ত জেলার অনেক রোগীর মৃত্যু হয়। সেক্ষেত্রে ৪ ঘণ্টার অপেক্ষা মৃতের পরিবারের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয়। এমনই অভিজ্ঞতা পুরুলিয়া গভঃ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. পীতবরণ চক্রবর্তীর৷ কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সুপার থাকাকালীন পীতবরণবাবু এই নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করেছিলেন। জানালেন, “ডাক্তারদের মধ্যে এই নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। কোথা থেকে ৪ ঘণ্টার বিষয়টি এল, কেউ জানেন না। সমস্ত বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি মেনে মৃত্যু ঘোষণা হলেও খুব বেশি হলে ২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।” পীতবরণবাবু আরও জানালেন, একটি মেডিক্যাল কলেজে গড়ে দৈনিক ২০ জন রোগীর মৃত্যু হয়। এখন যদি প্রতিটি রোগী মৃত্যুর পর ৪ ঘণ্টা করে বেড দখল করে থাকে তাহলে ৮০ ঘণ্টা ‘বেড-আওয়ার’ নষ্ট হচ্ছে।
[ আরও পড়ুন: বিয়ের প্রস্তাবে ‘না’, মুর্শিদাবাদে অ্যাসিড হামলার শিকার দশম শ্রেণির ছাত্রী ]
অনেক উন্নয়নশীল দেশে হৃৎপিণ্ড-শ্বাসতন্ত্রের প্রক্রিয়া থেমে যাওয়াকে মৃত্যুর সংজ্ঞা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। অনেক দেশেই একজন ব্রেন ডেথ হওয়া মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখার মতো যন্ত্রপাতি নেই। পার্থবাবু জানালেন, মৃত্যু নির্ণয়ের অনেক উন্নত গ্যাজেট এসেছে। সন্দেহ হলে মৃতের ইসিজি, ইইজি করা যেতে পারে। এখন গ্রামীণ হাসপাতালেও কার্ডিয়াক মনিটর বসানো হচ্ছে। সুতরাং ৪ ঘণ্টার ব্যবধানকে কমিয়ে আনাই যুক্তিযুক্ত। এদিন রাধানগরের অনুষ্ঠানে মৃত্যু ঘোষণার সময়সীমা নিয়ে আলোচনার আগেই প্রায় ৪০ জন মানুষ মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেন। পীতবরণবাবু জানান, চার ঘণ্টা দেহ রেখে দেওয়ার নিয়মের ফেরে চক্ষুদান আন্দোলনও মার খাচ্ছে। এই ব্যাপারে একটি সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়া প্রয়োজন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.