ক্ষীরোদদীপ্তি ভট্টাচার্য: এই বর্ষায় ফরাসিদের বাগান ভরে গিয়েছে বাংলার রজনীগন্ধার সৌরভে৷ ইউরোপের নানা দেশে ফুটছে খাস বাংলার গোলাপ৷ বেলকুঁড়ির সোহাগে সুগন্ধের নতুন দিশা লন্ডনে! বিদেশের ঘর-দুয়ার সেজে উঠছে গাঁদাফুলের সাজে।
কিছু দিন আগেই যে কলকাতায় এসে বাংলার ফুলের সৌরভ নিয়ে এমনই উচ্ছ্বাস দেখিয়ে গিয়েছেন আন্দ্রে গোমস৷ আন্দ্রে ফরাসি ফুল ব্যবসায়ী৷ দু’বছর ধরে রাজ্যে এসে ফুল কিনে নিজের দেশে রফতানি করেন তিনি৷ পোস্তায় আসেন ফুল চাষিদের খবর নিতে৷ এরপর চলে যান সরাসরি চাষিদের কাছে৷ তবে, আন্দ্রে একাই নন! মল্লিকঘাট ফুল বাজারের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার ফুলচাষিদের সঙ্গে এখন সরাসরি যোগাযোগ করছেন আন্দ্রের মতো বিদেশি ব্যবসায়ীরা৷ মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত, বসিরহাট, নদিয়া থেকে ফুল কিনে নিচ্ছেন৷ পাঠাচ্ছেন নিজের দেশে৷
শুধু ফুল নয়! টানা দু’বছরের বেশি সময় ধরে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, নদিয়ার বিভিন্ন গ্রাম থেকে সরাসরি গোলাপের বীজ লন্ডনে রফতানি হচ্ছে৷ অর্থাৎ লন্ডনের মাটি আর জলহাওয়ায় পুষ্ট হচ্ছে গোলাপ গাছ৷ বিলেতের জলহাওয়ায় ফুটছে বাংলার গোলাপ৷ এমন খবর পেয়ে উৎসাহিত মল্লিকঘাট ফুলবাজার পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান স্বর্ণকমল সাহা৷ স্বর্ণকমলবাবু বলেন, “ফুলচাষিরা যদি বিদেশে ফুল পাঠাতে কোনওরকম সাহায্য চান তবে অবশ্যই উদ্যোগ নেওয়া হবে৷”
অন্যদিকে পোস্তা মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি চন্দন চক্রবর্তী বলেছেন, “রাজ্যে এসে সরাসরি চাষিদের থেকে ফুল কেনেন বিদেশি ব্যবসায়ীরা৷ ফ্রান্স, লন্ডন, ইতালি, কানাডার মতো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজ্যের ফুলের ব্যাপক চাহিদা৷” চন্দনবাবু বলেন, কাশ্মীর বা উত্তরপ্রদেশের গোলাপের দাম অত্যন্ত বেশি৷ তাই চাহিদা থাকলেও ওই ফুলের ব্যবসা তেমন লাভজনক নয় বিদেশিদের কাছে৷ তুলনায় বাংলার গোলাপ ও গোলাপের বীজের দামও তুলনায় কম৷ তাই আন্দ্রের মতো ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাংলার চাষিদের থেকেই ফুল কেনেন৷”
চন্দনবাবু আরও বলেছেন, “উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার করে কুঁড়ি অবস্থাতেই বেল, রজনীগন্ধা, জুঁই, গাঁদা ফুল চলে যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে৷ পোস্তার ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, এক লরি গাঁদা বা জুঁই ফুল বিক্রি করলে অন্তত লাখ টাকা লাভ হয় ফুলচাষিদের৷ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার অন্তত একশোর মতো ফুলচাষি এখন সরাসরি বিদেশে ফুল রফতানি করছেন বলে দাবি করেছেন পোস্তার ফুল ব্যবসায়ীরা৷ অর্থাৎ ফুল চাষে আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে রাজ্যের চাষিদের৷ ফুলের পাশাপাশি গোলাপ বা রজনীগন্ধার বীজও কিনছেন বিদেশি ফুল ব্যবসায়ীরা৷
বিষয়টি জেনেছেন কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু৷ তিনি বলেন, বাংলার ফুলের ব্যবসা বিদেশের বাজারে বিরাট লাভজনক৷ তাই উদ্যানপালন বিভাগের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি৷ পাশাপাশি, মল্লিকঘাট ফুলবাজারের বর্তমান অবস্থা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা বলেন, “বাম আমলে ফুলবাজার পুনর্গঠনের জন্য কেন্দ্র প্রায় ৫ কোটি টাকা সাহায্য করেছিল৷ কিন্তু সেই টাকা ফেরত চলে গিয়েছে৷” এই অবস্থায় তৈরি হওয়া স্টলগুলি বণ্টনের জন্য প্ল্যান জমা দেওয়া হয়েছিল পুরসভায়৷ দ্রুত সেই কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.