নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি ও মালবাজার: ঘরে চাল-ডাল বাড়ন্ত৷ ভরসা ছিল শনিবার চা বাগানে সাপ্তাহিক মজুরি পেলে হাট থেকে চাল কিনে বাড়ি ফিরবেন৷ কিন্তু নোট বাতিলের গেরোয় মজুরি হয়নি৷ বাধ্য হয়েই রবিবার সকালে বাড়িতে পোষা ছ’টা হাঁস নিয়ে হাটের উদ্দেশ্যে রওনা হন জলপাইগুড়ির পাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা সুখেন আলি৷ কিন্তু তাতেও বিধি বাম৷ হাঁস বিক্রি হলেও বদলে মিলেছে দুটো পাঁচশো টাকার নোট৷ গোটা হাট ঘুরে সেই নোট ভাঙাতে না পেরে শেষমেশ ব্যাজার মুখে বাড়ির পথ ধরতে হল সুখেনকে৷ একইভাবে মূলোর বিনিময়ে বাড়িতে রান্নার জন্য ফুলকপি নিতে হল ওদলাবাড়ির খোকন সরকারকে৷ নোট বাতিলের জেরে ডুয়ার্সের গ্রামীণ হাটে এভাবেই ফিরে বিনিময় প্রথা৷
পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিলের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে ডুয়ার্সের চা বলয়ে৷ জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলায় রবিবার বেশ কিছু এলাকায় হাট বসে৷ কিন্তু ক্রেতার ভিড় ছিল না বললেই চলে৷ হাতেগোনা যাঁদের দেখা গিয়েছে, ধারবাকিতেই কেনাকাটা সেরেছেন তাঁরা৷ জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের কাদোবাড়ি, ছোবার হাট কিংবা অলিপুরদুয়ারের শামুকতলার হাতিপোতা, ধুপগুড়ির ডাউকিমারি, ওদলাবাড়িহাট, মালবাজার, মেটেলি ও নাগরাকাটা–সর্বত্রই ছবিটা ছিল প্রায় একই৷
একদিকে নোট বাতিলের জেরে অনেক চা বাগানে মজুরি হয়নি, সঙ্গে খুচরোর অভাব৷ দুইয়ের জেরে বিপত্তি বেড়েছে৷ যে ফুলকপি কয়েকদিন আগেও হাটে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, সেই ফুলকপিই এদিন বিক্রি হয় ১৭ টাকায়৷ যাঁরা পাইকারদের বিক্রি করেছেন, তাঁরাও পাঁচশো-হাজারের নোট নিতে বাধ্য হয়েছেন৷ ওদলাবাড়ি হাটের সবজি বিক্রেতা বিভীষণ অধিকারী, ক্ষীতিশচন্দ্র রায়, মশলা বিক্রেতা দুলাল গুপ্ত বলেন, তাঁরা পাঁচশো টাকার নোট নিচ্ছেন, তবে ফতোয়া দিচ্ছেন সেই টাকার সবটা দিয়েই সামগ্রী কিনতে হবে৷ হাটে কেনাকাটা করতে আসা মনোজ ওরাওঁ, নীতিন দাস জানালেন, প্রয়োজন মতো জিনিস কিনতে গেলে খুচরো দিতে হচ্ছে৷ বাধ্য হয়েই অল্প কিছু কেনাকাটা করেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে৷
টাকার বিনিময়ে কেনাকাটা না হলেও বিনিময়ের মাধ্যমে প্রয়োজন মেটাতে চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ৷ বাড়ির লাউ বা কুমড়োর বিনিময়ে সামান্য চাল বা আলু নেওয়ার ব্যবস্থা করতেও দেখা গিয়েছে অনেককে৷ সবজি ব্যবসায়ী সুধন পাল মুরগির মাংস কিনতে গিয়ে কিছু টাকা কম পড়ায় ব্যাগ থেকে বের করে খানিকটা সবজি ধরিয়ে দিলেন মাংস বিক্রেতাকে৷ নিমরাজি হয়ে তা নিয়েও নিলেন মাংস ব্যবসায়ী৷ হাটে চা বিক্রি করেন নরেশ বিশ্বকর্মা৷ এদিন তিনিও অনেকের কাছ থেকে চা বিক্রির বদলে স্ত্রী, ছেলেমেয়ে নিয়ে পেট চালাতে সবজি ও ডিম নিয়েছেন৷
সকলেরই বক্তব্য, কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে জানি না৷ তাই যেভাবে খেয়ে পড়ে বাঁচা যায় সেই চেষ্টাই করছেন তাঁরা৷ এভাবেই ডুয়ার্সের হাটে ইতি উতি কেনাবেচার ফাঁকে ফিরে এসেছে অতীতের বিনিময় প্রথা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.