শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: আর্থিক সংস্থান নেই বললেই চলে৷ জীবিকার সন্ধানে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন ওঁরা৷ সংসারের আর পাঁচটা মানুষ একটু সুখে থাকবে, দিন আনি দিন খাই পরিবারে অন্ন জুটবে-এই আশাতেই হাসি মুখে উত্তরপ্রদেশের বরেলি পাড়ি দিয়েছিলেন ওরা৷ কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসেই বদলে গেল গোটা ছবি৷ ভাবনার সঙ্গে মিলল না বাস্তব৷ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ছ’জনের৷ বুধবার রাতেই বাড়ি উত্তর দিনাজপুরে ফেরে মৃতদেহ৷ বৃহস্পতিবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় প্রত্যেকের৷
সোমবার সকালে প্রাণ হারান ছজন৷ মঙ্গলবার দুঃসংবাদ পৌঁছয় বাড়িতে৷ তারপর থেকে শুরু দেহ বাড়ি ফেরার অপেক্ষার৷ প্রিয়জনকে শেষ দেখার করার অপেক্ষা৷ সময় গুনতে গুনতেই চোখের জল মুছেছেন পরিজন ও প্রতিবেশীরা৷ বৃহস্পতিবার সকালে প্রতীক্ষার অবসান৷ কফিনবন্দি হয়ে বাড়ি ফেরেন দুর্ঘটনায় নিহত মহম্মদ হাসিম আলি ও নিজাম আলির দেহ৷ দেহ দুটি দেখে নিজেদের সামলাতে পারেননি কেউই৷ গ্রামে নামে কান্নার রোল৷ চার ও দু’বছর বয়সী দুই সন্তানের বাবা কওসর আলি৷ বারিয়ল ঘাটের বাসিন্দা ওই শ্রমিকের দেহ দেখেই সংজ্ঞা হারান তাঁর স্ত্রী৷ ছোট্ট দুটো বাচ্চাকে কীভাবে চলবে সংসার? সেই চিন্তায় যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে তাঁর৷ রায়গঞ্জের গৌরী অঞ্চলের হেলেঙ্গিয়ার ছবিটাও ছিল একইরকম৷ ওই গ্রামে ফেরে নাজিমুদ্দিন আলি ও আমিরুল হাসানের দেহ৷ গ্রামের প্রত্যেকের উপস্থিতিতে নিহতদের শেষকৃত্য হয় এলাকাতেই৷ বন্ধ হয়ে এলাকার প্রত্যেকটি স্কুলও৷
শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী গোলাম রব্বানি৷ ছিলেন রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস, জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি পূর্ণেন্দু দে, ইটাহারের জেলা পরিষদ সদস্য বিউটি বেগম-সহ অন্যান্য জেলা প্রশাসনিক আধিকারিকরা৷ জেলাশাসক অরবিন্দ কুমার মিনা নিহতদের পরিবারের জন্য দু’লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের কথা রাজ্য সরকারকে জানান হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন৷ শ্রমিকদের সৎকারের জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকার এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা দিয়েছে বলেই জানান মহম্মদ সেলিম৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.