অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়িঃ উত্তরের বন্যার জন্য কার্যত কেন্দ্র সরকারকে দায়ী করলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটান কিছু না জানিয়েই হঠাৎ জল ছেড়ে দেওয়ায় আলিপুরদুয়ার ভেসে যাচ্ছে। তার জন্য কেন্দ্র কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। সোমবার উত্তরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রসাশনিক বৈঠক শেষে একথা জানালেন সেচমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ভুটানের সঙ্গে কথা বলতে হলে কেন্দ্রকেই উদ্যোগ নিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের পাঠিয়েছে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে। আমরা ফিরে গিয়ে তাকে রিপোর্ট জমা দেবো।”
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের নেতৃত্বে বিশেষ দল পৌঁছে যায় এদিন। বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে সোজা জলপাইগুড়ি জেলার গাজলডোবার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেখানে রাজগঞ্জ ব্লকের হদুগছ এলাকায় যান সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। বিগত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষার কারনে কালভার্ট ভেঙে রাজগঞ্জ ব্লকের হদুগছ ও যাত্রাপাড়ার মধ্যে যোগাযোগ সম্পুর্নভাবে বন্ধ। সেখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন মন্ত্রী। তবে জল অনেকটাই নেমে গিয়ে পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক। হদুগছ থেকে গাজলডোবার তিস্তা ব্যারেজ পরিদর্শন করেন। সেখান থেকে সোজা উত্তরকন্যায় চলে আসেন মন্ত্রী। সেখানে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের প্রধান সচিব দুষমন্ত নারীওয়ালা ও কৃষি দফতরের প্রধান সচিব ওঙ্কার সিং মীনা সহ সেচ দফতরের প্রধান সচিব প্রভাত কুমার মিশ্রাকে নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে বসেন। বৈঠকে দার্জিলিং , কালিম্পং , জলপাইগুড়ি , আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার জেলাশাসক, পুলিশ আধিকারিক সহ সেচ, কৃষি, বন, দমকল, পূর্ত, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক সারেন মন্ত্রী। তবে উত্তরে বন্যা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে মূলত ভূটানকেই দায়ী করেন মন্ত্রী। কোন প্রকার তথ্য বা যোগাযোগ ছাড়াই জল ছাড়ছে ভূটান। যার ফলেই এই পরিস্থিতি৷ ভূটানের জল ছাড়ার ফলে ডুয়ার্সের রায়ডাক , সঙ্কোশ , বাসরা , কালজানি , জয়ন্তী , তোর্সা নদীতে জল বাড়ছে। যার ফলেই বন্যা হচ্ছে। ৮ জুলাই থেকে এই ৫জেলায় অবিরাম বৃষ্টিপাত হয়েছে । মানুষ সমস্যার মধ্যে রয়েছে। তবে এই বন্যা পরিস্থিতির জন্য ভুটানকে দায়ী করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “ভূটানের জল মূলত আলিপুরদুয়ারের উপর এসে পড়ে। মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার কেন্দ্রকে জানিয়েছেন বিষয়টি। কিন্তু কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। ভূটান কিছু না জানিয়েই জল ছাড়ছে৷ তারা কোনও তথ্যই দিচ্ছে না। আগে থেকে জানালে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এটা বন্ধ করার জন্য কেন্দ্রকেই ভুটানের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কারণ এটা রাজ্যের কাজ নয়। তবে আগের থেকে খাল সংস্কার করায় বানারহাট ও জলপাইগুড়ি খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। শুধু তাই নয় কৃষিক্ষেত্র, জঙ্গল, পানীয় জল ক্ষতি হয়নি। চাবাগানে সামান্য সমস্যা হয়েছে।”
প্রসঙ্গত এদিকে বিগত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কোচবিহারের ৪৮ টি ও আলিপুরদুয়ারে ১৩টি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত। আবার জলপাইগুড়িতে ৭০০ টি বাড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলায় ২৫০ টি বাড়ি আংশিক ও ৭০ টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারমধ্যে আলিপুরদুয়ারের ১৩ টি বড় জায়গার মধ্যে ৭ টি এলাকায় কাজ চলছে। মঙ্গলবার বীরুবাদপুরে ৯ কোটি টাকা ব্যায়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। তাতে সেখানকার ১ হাজার ৬০০ হেক্টরের পাশাপাশি ৩২ হাজার মানুষ উপকৃত হবে। অন্যদিকে, মালদার মুজনাই ও ফুলাহার নদী ভাঙন নিয়েও বাংলা, বিহার ও ঝাড়খন্ড সরকার যৌথভাবে ওই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.