নিজস্ব সংবাদদাতা, তেহট্ট: নিয়ম যতই পালন করুন, শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার আগে যতই দু’হাত ভরে বাজার করে নিয়ে যান, ভোটার কার্ডটি সঙ্গে না থাকলে জামাইষষ্ঠীর আনন্দই মাটি৷ গ্রামে স্রেফ ‘নো এন্ট্রি’ হয়ে যাবে৷
নদিয়ার হোগলবেড়িয়া থানার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ওপারের গ্রাম চরমেঘনা৷ ভোটার কার্ড ছাড়া এই গ্রামে জামাইষষ্ঠীতে যাওয়া যায় না৷ আসলে সীমান্ত এলাকা বলে নিরাপত্তা একটু কড়াকড়ি৷ কাঁটাতারের গেটে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে ভোটের পরিচয়পত্র জমা দিয়ে এবং তাঁদের খাতায় নাম লিখিয়ে তবে চরমেঘনায় প্রবেশের অনুমতি মেলে৷ গ্রামের বাসিন্দা অমিত মাহাতোর কথায়, ‘কাঁটাতারের গেট হওয়ার পর জামাইষষ্ঠী বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে বাইরের অতিতিরা ভোটার কার্ড না থাকার কারণে ফিরে গিয়েছেন৷ তাই বিশেষত জামাইরা এই গ্রামে আসার আগে বারবার বলে দেওয়া হয়, তাঁরা যেন সঙ্গে পরিচয়পত্র নিয়ে আসেন৷’ গ্রামের মেয়ে স্বপ্না বলছে, ‘এই গ্রামে বড় হয়েছি৷ তাই কাঁটাতারের এপারের গ্রামের আসতে বা গ্রাম থেকে যেতে সীমান্তের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়৷ বছর খানেক আগে কল্যাণীর লিটন বিশ্বাসের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়৷ আগের বছর পরিচয়পত্র নিতে ভুলে গিয়েছিলাম৷ বাবার বাড়ি আর যেতে পারিনি৷’
সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবার আর ভুল করেননি৷ শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে বাসে ওঠার আগে একই ভুল আর করেননি স্বপ্না। দই, মিষ্টি, কাপড় নেওয়া হোক বা না হোক – ভোটার কার্ডটা আগে থেকে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়েছেন। একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ক্যানিংয়ের বাসিন্দা স্বপন বিশ্বাস৷ স্ত্রী নমিতাকে নিয়ে এবারেও জামাইষষ্ঠী করতে গিয়েছেন চরমেঘনায়। তাঁর কথায়, ‘গত শনিবার স্ত্রী ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে এখানে চলে এসেছি। আসার সময় প্রতিবারের মত এবারও গেটে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কাছে ভোটের পরিচয়পত্র জমা দিয়ে এসেছি। রবিবার পর্যন্ত শ্বশুরবাড়ি থাকব, তাও তাদের জানিয়ে এসেছি।’
গ্রামের বাসিন্দারা জানান, একশো বাহাত্তরটি পরিবারের বাস সেখানে। সন্ধের পরে কাঁটাতারের গেট বন্ধ হয়ে যায়। সারা বছরের মতো জামাইষষ্ঠীতেও মেয়ে-জামাইকে এখানে প্রবেশের আগে নিয়মমতো তাঁদের পরিচয়পত্র জমা দিতে হয়। আগে এমনও হয়েছে যে, ভোটার কার্ড সঙ্গে না থাকায় নতুন মেয়ে-জামাইকে গ্রামে আসার অনুমতি দেয়নি বিএসএফ। ব্যাগ-প্যাঁটরা নিয়ে মেয়ে-জামাই গেটে আটকে রয়েছে, শুনে বাড়ি থেকে নিজেদের পরিচয়পত্র নিয়ে শ্বশুর-শাশুড়িকে ছুটতে হয়েছে। শেষে জামিনদারের মতো শ্বশুর-শাশুড়ির জিম্মায় ঢুকতে দেওয়া হয়েছে নবদম্পতিকে।
তবে এও তাঁরা বলছেন, এখন সীমান্তের গেটে আগের মতো সমস্যা নেই। বছর পনেরো আগে সীমান্তের কড়াকড়ির জন্য গ্রামের মেয়েদের বিয়ে দেওয়া কঠিন ছিল৷ এখন বিএসএফ-এর মানবিক ব্যবহার বিষয়টিকে অনেক সহজ করেছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আধিকারিক জানান, দেশের নিরাপত্তার জন্য এটাই নিয়ম। মানুষ তাঁর নিজের সঠিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে গ্রামে যাবে, এটাই নিয়ম৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.