সুমিত বিশ্বাস, পুঞ্চা (পুরুলিয়া): “বিজেপিকে ভোট দিলে ঘর, রেসিডেন্স সার্টিফিকেট, সমব্যথী, কন্যাশ্রী কিছুই দেব না।” ভোটারদেরকে এই বার্তা দিতে দলের কর্মীদের উপর ফরমান জারি করলেন শাসক দলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিই। রবিবার পুরুলিয়ার মানবাজার বিধানসভার পুঞ্চার ধাদকির বুথ ভিত্তিক পর্যালোচনা সভায় এমনই নির্দেশ দেন পুঞ্চা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা পুঞ্চা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কৃষ্ণচন্দ্র মাহাতো।
এদিন পর্যালোচনা সভায় তিনি যখন এমন কথা বলছেন তখন পাশে বসেছিলেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো। সভায় সদর্পে কৃষ্ণবাবু বলেন, “পঞ্চায়েত এখন আমাদের দখলে। কেউ যদি বিজেপিকে ভোট দেয় তাহলে আগামী চার বছর ঘর, রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট, সমব্যথী, কন্যাশ্রী কিছুই দেব না। এই বার্তা পরিষ্কারভাবে ভোটারদের দিয়ে দিতে হবে।”
দক্ষিণ পুরুলিয়ার এই মানবাজার বিধানসভার পুঞ্চা ব্লকেও বিজেপি বাড়ছে। অথচ এই এলাকা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাসতালুক হিসাবে পরিচিত। তাছাড়া, এই মানবাজার বিধানসভা থেকে জিতেই মন্ত্রী হন সন্ধ্যারানি টুডুও। তাই বিজেপিকে আটকাতে দলের বুথ ভিত্তিক পর্যালোচনা সভায় কর্মীদের ওপর এমন ফরমান জারি করে বিতর্কে জড়ান পঞ্চায়েত সমিতির ওই সভাপতি। তবে পরে তাঁর ব্যাখ্যা, “বিজেপি একটা সাম্প্রদায়িক দল। ওরা ধর্মের নামে রাজনীতি করে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করতে চাইছে। এই বিজেপি দেশের কাছে বড় বিপদ। তাই ওদের হঠাতেই ভোটারদের কাছে আমাদের এই বার্তা। তাই এখন দেওয়ালে দেওয়ালে আমাদের স্লোগান এই বিজেপি আর না।” পরে এই পর্যালোচনা সভায় আসেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালি ও মানবাজার-১ নম্বর ব্লক সভাপতি তথা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের রাষ্ট্র মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু।
এদিনের ওই পর্যালোচনা সভাতে পঞ্চায়েত সমিতির ওই তৃণমূল সভাপতি এলাকায় কারা বিজেপি করছে তার তালিকাও কর্মীদের অবিলম্বে তৈরি করার নির্দেশ দেন। বিজেপিকে ভোট দিলে যে কোনও সরকারি সুবিধা মিলবে না, সভাপতির বক্তব্যকে এদিন কার্যত সমর্থনই করেন পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতোও। তাঁর কথায়, “প্রয়োজনে এই ধরনের রাজনীতিও করতে হবে। তবে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত-সহ পুরসভায় রাজনৈতিক রং দেখে এমন পক্ষাপাতিত্ব নতুন নয়।” কিন্তু লোকসভা ভোটের মুখে দলের নেতা-কর্মীদের সরাসরি এমন নির্দেশ দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন ওই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। বিষয়টি এড়িয়ে যান মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু ও সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.