সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: একদিকে ভোটের উচ্ছ্বাস, আর অন্যদিকে পাশের গ্রামেই ধরা পড়ল ঠিক তার বিপরীত চিত্র। সেখানে ভোট থেকেও নেই, আছে অলস ছুটির অখণ্ড অবসর। বাগনান থানার বেশ কিছু এলাকায় সোমবার সকাল থেকেই এই দু’রকম ছবি ধরা পড়েছে। বাগনান-২ পঞ্চায়েত সমিতিতে ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত শরৎ, ওড়ফুলি, চন্দ্রভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছে। তাই এইসব এলাকার মানুষের কাছে ভোট আক্ষরিক অর্থেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।
[ ভোটের যুদ্ধ শেষ, বেলাশেষে একপাতে খিচুড়ি খেলেন যুযুধান তৃণমূল-বিজেপি কর্মীরা ]
রূপনারায়ণ নদের পূর্ব তট ছুঁয়ে রয়েছে ওড়ফুলি, জালপাই, নাউপালা, মেল্লক সহ বেশ কিছু গ্রাম। এইসব গ্রামগুলি ওড়ফুলি এবং শরৎ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। এই দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪০ টি আসন-সহ ৬ টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বিরোধীদের একজন প্রার্থীও না থাকায় এই পঞ্চায়েত দুটি আগেই তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে চলে গিয়েছে। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকার কথা, তা এদিন চোখে পড়েনি কোথাও। এই দিনটিকে কার্যত একটি বাড়তি ছুটির দিন হিসাবেই কাটিয়েছেন এলাকার মানুষ। অখণ্ড অবসরের ফলে কেউ যান পাড়ার ক্লাবে কেরাম খেলায় যোগ দিতে, আবার কাউকে মগ্ন থাকতে দেখা যায় পাড়ার চৌরাস্তার মোড়ে তাসের আড্ডায়। গ্রামের চায়ের দোকানগুলি ছিল রবিবারের মতোই জমজমাট। সেখানে ভোটের থেকেও বেশি প্রাধান্য পায় আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আম্বাতি রায়াডুর শতরান প্রসঙ্গ। ওড়ফুলি গ্রামে কালীপুজোর প্রস্তুতি ছিল চোখে পড়ার মতো, যার কাছে “ভোট উৎসব” কার্যত ম্লান হয়ে যায়।
[ ভোটে নেই আরাবুল, অশান্ত ভাঙড়ে কেমন হল গণতন্ত্রের উৎসব? ]
ওড়ফুলি ও শরৎ গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশেই রয়েছে কল্যাণপুর পঞ্চায়েত। সেখানকার পানিত্রাস শিবতলা, ডাকাবেড়িয়া, বড়াবার, গোবিন্দপুর, বিরামপুর প্রভৃতি বুথগুলিতে ছিল প্রকৃত উৎসবের চেহারা। দলে দলে গ্রামের মানুষ ভোট দিতে আসেন। পানিত্রাস শিবতলার বাসিন্দা দেবনারায়ণ মাইতি জানান, এদিন সকাল থেকেই এলাকার মানুষ উৎসবের মেজাজে ভোট প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি জানান সেখানে সব দলের এজেন্টরা নিজেদের খাবার সকলের মধ্যে ভাগ করে খান। যেখানে সোমবারের নির্বাচন প্রকৃত অর্থেই উৎসবের চেহারা নিয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের হাওড়া গ্রামীণ জেলা সভাপতি পুলক রায় জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্প থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ উপকৃত হয়েছেন। উন্নয়নের ফলশ্রুতিতেই বহু জায়গায় বিরোধীরা প্রার্থী খুঁজে পাননি। সেই সব এলাকায় তৃণমূল প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন। যেখানে যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে সেখানেও মানুষ বিরোধীদের সমস্ত কুৎসা উড়িয়ে দিয়ে উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.