সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রাজনৈতিক স্লোগান, দলের প্রতীক, প্রার্থীর নামে রঙিন হয়নি দেওয়াল। তা দখল করেছেন টুরগার বিরোধীরা৷ জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার সৌন্দর্যরানি অযোধ্যা পাহাড়ের প্রায় ৬৫টি গ্রামের দেওয়ালে সেভাবে চোখে পড়ছে না ভোটের কথা। বরং পাহাড়ের কুঁড়ে ঘরে দেওয়াল জুড়ে লেখা আছে, ‘টুরগা কাঁদে, বাঁদু কাঁদে, কাঁদে কাঁঠালজল/কাঁদবে এবার অযোধ্যাবাসী,ঝরবে চোখের জল।’ কিংবা ‘আমাদের যদি বলবে পালা/জল প্রকল্পে পড়বে তালা।’
অযোধ্যা পাহাড়ের মাথায় আরও একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করতে চলেছে রাজ্য সরকার। পাহাড়ের টুরগা নালা বা ঝরনাকে কাজে লাগিয়ে মোট ২৯২ হেক্টর জমিতে জাপানের আর্থিক সহায়তায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তৈরি হবে প্রকল্প৷ এই ২৯২ হেক্টর জমির মধ্যে অধিকাংশই বনভূমি। আর তাতেই সরব পাহাড়ের আদিবাসী মানুষজন। কিন্তু, এখনও এই প্রকল্পে স্টেজ টু-র অনুমোদন দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। এর মধ্যেই পরিবেশ বাঁচানোর দাবিতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতায় নেমেছেন পাহাড়ের মানুষজন। নেপথ্যে থেকে তাঁদের আন্দোলনে শামিল হচ্ছে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণপ্রেমী-সহ একাধিক সামাজিক সংগঠন। বনদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী,এই প্রকল্প তৈরি হলে কাটা পড়বে প্রায় ১০ হাজার গাছ৷ বড় বিপদের মুখোমুখি হবে বন্যপ্রাণ। এনিয়ে স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হলে গাছ কাটায় স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। মঙ্গলবার এই বিষয়ে শুনানি৷ ভোটের মুখে যার দিকে তাকিয়ে আছেন পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় লাগোয়া অঞ্চলের মানুষজন।
কংগ্রেস নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই কার্যত টুরগার বিষয়টিকে সামনে রেখে ভোট প্রচারও শুরু করেছে। সবমিলিয়ে অযোধ্যা পাহাড়ে থমথমে পরিস্থিতি৷ আর এটাই ভাবাচ্ছে প্রশাসনকে। এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা অরণ্যের অধিকার রক্ষাকারী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা জুওয়ান মহলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি রাজেন টুডুর কথায়, ‘গাছ কেটে এই প্রকল্প হতে দেব না। এখন আমরা উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে রয়েছি।’
২০১৬ সাল থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হলেও গত বছরের শেষ দিক থেকেই এই প্রকল্পের বিরোধিতায় পাহাড়ে চলছে তৈরি হয়েছে ছোট ছোট স্তরে আন্দোলন। ভোটের মুখে শুরু হয়েছে দেওয়াল লিখন। নিজেদের বাড়ির দেওয়ালে প্রকল্প-বিরোধী নানা স্লোগান লিখছেন তাঁরা নিজেরাই৷ সোশ্যাল মিডিয়াতেও এনিয়ে প্রচার চলছে৷ আর তাই ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডও প্রকল্পের বিষয়ে সাবধানী পদক্ষেপ নিচ্ছে। পুরুলিয়ার বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী যে এলাকা ঘিরে টুরগা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হওয়ার কথা, সেখানে ঔষধি গাছের সংখ্যা হাজার দুয়েক৷ বনদপ্তর বলছে, ওই এলাকায় এখন জঙ্গল বেড়েছে। ফলে গাছের সংখ্যা হাজার দশে ঠেকলেও অবাক হওয়ার নেই৷ ওই জঙ্গল এলাকায় ৫৮০ রকমের পাখি, ৪৮৬ রকমের বন্যপ্রাণীর বাস৷ এদের পাশাপাশি নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য আদিবাসীরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন৷
ছবি : অমিত সিং দেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.