ধীমান রায়, কাটোয়া: স্কুল আছে। ক্লাসরুম, ব্ল্যাকবোর্ড, চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ – সব আছে। কিন্তু নেই কোনও শিক্ষক। তাই বলে কি পড়াশোনা বন্ধ থাকবে? অনিশ্চিত হয়ে পড়বে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ? এমনটা হতে পারে না। এটা ভেবেই এগিয়ে এলেন স্থানীয় শিক্ষিত দাদা,দিদিরা। বিনা পারিশ্রমিকে তাঁরা নিয়মিত স্কুলে পড়াচ্ছেন। শিক্ষকহীন বর্ধমানের আউশগ্রামের লক্ষ্মীগঞ্জ আদিবাসী জুনিয়র হাইস্কুলে পঠনপাঠন চালু রেখেছেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক,যুবতী। তাঁদের ভরসাতেই নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে গ্রামের পড়ুয়ারা।
আউশগ্রামের দিগনগর ২ অঞ্চলের অন্তর্গত আদবাসী অধ্যুষিত লক্ষীগঞ্জ গ্রাম। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৪৫০টি পরিবারের বাস এই গ্রামে। তার মধ্যে ৩৫০টিরও বেশি আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত পরিবার। যাদের অধিকাংশই জনমজুরি করেন। লক্ষ্মীগঞ্জ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে রয়েছে জুনিয়র হাইস্কুল। জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার সময় তিনজন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল। নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তিতে তাঁরা পড়াচ্ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেই তিনজন শিক্ষকের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। তাঁরা স্কুল ছেড়ে চলেও গিয়েছেন। তাই বর্তমানে শিক্ষক শূন্য লক্ষ্মীগঞ্জ আদিবাসী জুনিয়র হাইস্কুল।
[ ‘কাঁটাতার বসানোর জমি দিচ্ছে না’, অনুপ্রবেশ ইস্যুতে রাজ্যকে আক্রমণ রাজনাথের ]
স্থানীয়দের কথায়, গত বছর ডিসেম্বর মাসের পর কোনও শিক্ষক স্কুলে ছিলেন না। তখন অভিভাবকরা বৈঠক করেন। আলোচনার পর সমাধানের একটি উপায় বেরোয়। গ্রামের শিক্ষিত কয়েকজন যুবক,যুবতীর কাছে অভিভাবকরা অনুরোধ করেন, তাঁরা যেন স্কুলের পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পঠনপাঠন চালিয়ে যান। তাতে সাড়া দেন চারজন যুবক, যুবতী। লক্ষ্মীগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা গণেশ টুডু, লক্ষ্মীরাম বাস্কে, সাবিত্রী মণ্ডল ও দুলালি বাস্কে – এই চারজন মিলে এখন স্কুলটি চালাচ্ছেন। জানা গিয়েছে, গণেশ ও লক্ষ্মীরাম দু’জনে স্নাতক। সাবিত্রী এমএ পাঠরতা, দুলালি ইংরেজিতে এমএ করে বিএড পড়ছেন। সপ্তাহে শনিবার বাদ দিয়ে বাকি দিনগুলি ক্লাস নেন দুলালি। সোম থেকে শনি – বাকি তিনজন নিয়মিত ক্লাস নিয়ে যাচ্ছেন। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে ৬৫ জন পড়ুয়া ছিল লক্ষ্মীগঞ্জ আদিবাসী জুনিয়র হাইস্কুলে। এখন পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৪৫ জন পড়াশোনা করে।
গণেশ টুডু, দুলালি বাস্কেরা বলছেন, “এই স্কুলের পড়ুয়ারা প্রায় সকলেই গরিব পরিবারের। তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমরা স্কুলের ক্লাস বন্ধ হতে দিইনি। তবে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি, যাতে স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করা হয়।” জানা গিয়েছে, পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গেই ওই ৪৫ জনের মিড ডে মিল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ছবি: জয়ন্ত দাস
[ রাজ্যে ঊর্ধ্বমুখী পারদ, সপ্তাহান্তে প্রায় উধাও শীত ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.