নন্দন দত্ত, বোলপুর: এবছরও বোলপুরের (Bolpur) ঐতিহ্যবাহী ‘শান্তিনিকেতন পৌষমেলা’ হচ্ছে না। মেলার পরিকাঠামোগত অসুবিধার জন্য এই মেলা করা সম্ভব হবে না বলে বৃহস্পতিবার বোলপুর পুরসভাকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিল মেলার দায়িত্বে থাকা শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। বোলপুর পুরপ্রধান পর্ণা ঘোষ চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি নিয়ে সকলের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন। বিকল্প পৌষমেলা (Poush Mela)করা যায় কিনা, তার পরিকল্পনা করা হবে।
২০২০ সালে করোনা অতিমারীর (Coronavirus) জন্য বন্ধ ছিল ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। পরের বছর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় অনেকেই মনে করেছিলেন, ছোট করে হলেও পৌষমেলা হবে। এই মর্মে মাঠ চেয়ে বিশ্বভারতীর (Vishva Bharati) উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে চিঠিও দেয় বোলপুর পৌরসভা। মেলা করার জন্য শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট, বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি ও পৌষমেলা বাঁচাও কমিটি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে আবেদন করে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সে নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। বাধ্য হয়ে গতবছর বোলপুরের ডাকবাংলো ময়দানে বোলপুর পৌরসভার উদ্যোগে ‘বিকল্প পৌষমেলার’ আয়োজন করে ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ।
এবছর তাই জুলাই মাসে বিশ্বভারতী কর্মী পরিষদের কাছে মেলা করতে চেয়ে চিঠি দেয় শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কিছু প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সে বিষয়ে কোনও সহযোগিতা বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। তাই বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতন ট্রাষ্টের সম্পাদক অনিল কোনার পুরপ্রধানকে লিখিত চিঠি দিয়ে জানান, ‘‘২০২২-এর পৌষমেলা আসন্ন। এ বছর শান্তিনিকেতন মেলার মাঠ সংলগ্ন ভুবনডাঙার চারটি বাঁধ আবর্জনা ও কচুরিপানায় পূর্ণ হয়ে আছে। মেলায় একটি প্রধান আবশ্যিক বিষয় জল।’’ লক্ষাধিক মানুষের এই মেলায় আর বাঁধগুলি সংস্কার সম্ভব নয়। বিশেষ করে বাঁধগুলি বিশ্বভারতীর মালিকানাধীন। তাই পূর্বপল্লির মাঠে পৌষ-উৎসব বা পৌষমেলা করা যাবে না। তবে চিঠিতে অনিলবাবু পুরপ্রধানকে বিকল্প মেলার জন্য উদ্যোগ নিতে আবেদন করেছেন। তিনি লেখেন, ‘‘আপনারা উদ্যোগী হলে গত বছরের মতো এটা সাফল্যমণ্ডিত হবে, এই কামনা করি।’’
১৮৯৫ সালে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর পৌষমেলা শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে মন্বন্তরের জন্য এবং ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে পৌষমেলা বন্ধ রাখা হয়েছিল। এছাড়া ৭ পৌষ শান্তিনিকেতনে পৌষ উৎসব ধারাবাহিকভাবে পালন করা হয়। উল্লেখ্য, এবছর মেলা করার জন্য উদ্যোগ নেয় শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। বিশ্বভারতী কর্মী পরিষদের কাছে সে জন্য কিছু প্রস্তাব দেয়। ভুবনডাঙার বাঁধ সংস্কার, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘাত মিটিয়ে ফেলা, ট্রাস্টের নামে যে অ্যাকাউন্ট আছে তা বন্ধ করা ইত্যাদি প্রস্তাব জানিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। চিঠি পাওয়ার পর বিশ্বভারতীর কর্মী পরিষদ শান্তিনিকেতন ট্রাস্টকে ৪ আগস্ট জানিয়ে দেয়, প্রস্তাবগুলি মানা সম্ভব নয়। যদিও ইতিমধ্যে পৌষমেলা করার দাবিতে বোলপুরে এসে সরব হয়েছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.