নন্দিতা রায়: আপাতত বদলাচ্ছে না ঐতিহাসিক বর্ধমান স্টেশনের নাম। স্টেশনের নাম বর্ধমান জংশন থাকবে বলেই মঙ্গলবার জানিয়ে দিল রেলমন্ত্রক। কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই ঘোষণা করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী বটুকেশ্বর দত্তের নামে নাম রাখা হবে বর্ধমান স্টেশনের। কিন্তু তারপর এই নামবদল নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। মনে করা হচ্ছে এই বিতর্কের মাঝে পড়েই নামবদল থেকে বিরত রইল রেল।
কিন্তু রেলমন্ত্রকের তরফে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে অন্য কথা বলা হয়েছে। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কোনও জায়গার নাম বদল করতে হলে প্রথমে রাজ্যের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে রাজ্যের তরফে এমন কোনও আবেদন আসেনি। এমনকী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফেও তাদের কিছু জানানো হয়নি বলে জানিয়েছে রেলমন্ত্রক। যদি কেউ ব্যক্তিগতভাবে স্টেশনের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, এটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। রেলমন্ত্রক এর দায় নেবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল দিল্লির সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি বা সংসদে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন বিপ্লবী ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত। ফাঁসিকাঠে প্রাণ দিতে হয়েছিল ভগৎ সিংকে। আর বটুকেশ্বর দত্তকে আন্দামানের সেলুলার জেলে দীপান্তরে পাঠিয়েছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। ইতিহাসবিদদের মতে, বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত বর্ধমানের ভূমিপুত্র। ১৯১০ সালে ১৮ নভেম্বর অবিভক্ত বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ ব্লকের ওঁয়াড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু বাবার চাকরির সুবাদে অল্প বয়সেই কানপুরে চলে যান। ১৯২৪ সালে কানপুরে ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদের মতো বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন বাংলার বটুকেশ্বর দত্ত। ১৯২৯ সালে সংসদে বোমা বিস্ফোরণে ফের বর্ধমানে পৈতৃক বাড়িতে চলে আসেন তিনি। খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে ভগৎ সিংয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন আত্মগোপন করেছিলেন।
এখনকার পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষে ওঁয়াড়ি গ্রামে বিপ্লবীর পৈতৃক বাড়িটি রাজ্য সরকারকে দান করেছেন বটুকেশ্বর দত্তের কন্যা ভারতী দত্ত বাগচী। তাঁর দাবি, পাটনায় বটুকেশ্বর দত্তের প্রয়াণদিবসের অনুষ্ঠানে ‘বর্ধমান জংশন’ স্টেশনের নাম ‘বটুকেশ্বর দত্ত জংশন’ করার কথা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। খবর এসে পৌঁছায় বর্ধমানেও। আর এরপরই বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তন নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়। তীব্র আপত্তি জানায় জৈন সম্প্রদায়। কারণ তাদের মতে, ২৪তম জৈন তীর্থঙ্কর বর্ধমানা স্বামীর নামানুসারেই এখানকার নাম হয়েছে বর্ধমান। তাদের কল্পসূত্র অনুযায়ী, মহাবীর আস্তিকনগরে বেশ কিছুকাল কাটিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই আস্তিকনগরের নামই হয় বর্ধমান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.