চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: একদিকে রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে আউটডোরে। ভোর থেকে টিকিট কেটে অ্যালোপ্যাথি ডাক্তারবাবুদের চেম্বারের বাইরে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রোগীরা। অন্যদিকে, একই হাসপাতালের হোমিওপ্যাথি আউটডোরে বসে কার্যত মাছি তাড়াচ্ছেন চিকিৎসক। আসানসোল জেলা হাসাপাতালে গেলে নজরে পড়বে এই দুধরণের দুই বিপরীত চিত্র।
অভিযোগ, হোমিওপ্যাথি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও সচেতনতার অভাবেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পরিষেবার এই বেহাল দশা জেলা হাসপাতালে। যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, এদেশের ৪০ শতাংশ মানুষ আস্থা রাখেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ওপর। তার কারণ, অ্যালোপাথির থেকে হোমিওপ্যাথির খরচ অনেক কম হওয়ায় এক শ্রেণির মানুষ ভরসা করেন এই চিকিৎসার উপরেই। সেই জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে বছর পাঁচেক আগে আসানসোল জেলা হাসাপাতালে চালু হয়েছিল আয়ুশ হোমিওপ্যাথি ক্লিনিক। সেই ক্লিনিকে এখন স্থায়ী চিকিৎসক বসলেও দিনে চার পাঁচজন রোগীও আসেন না। অথচ একই বিল্ডিং-এ অ্যালোপ্যাথির আউটডোর সামালতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
গত অক্টোবর থেকে আয়ুশ হোমিওপ্যাথি ক্লিনিকে বসছেন চিকিৎসক লক্ষ্মীগান্ধী সরকার। তিনি স্থায়ী চিকিৎসক। আটমাস পেরিয়ে গেলেও ক্লিনিক কার্যত রোগী শূন্য রয়েছে। ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রক থেকে হোমিওপ্যাথি ক্লিনিকের ভবন নির্মাণ হয়েছিল। রাজ্যে চারটি সরকারি এবং সাতটি বেসরকারি হোমিওপ্যাথি কলেজ রয়েছে৷ আসানসোলেও রয়েছে হোমিওপ্যাথি কলেজ। তার মধ্যে বাড়তি পাওনা এই ক্লিনিক। তবু তার ব্যবহার ঠিকঠাক না হওয়ায় আক্ষেপ রয়েছে চিকিৎসকের।
উল্লেখ্য, হোমিওপ্যাথির আবিষ্কার মহাত্মা ক্রিশ্চিয়ান ফ্রেডারিক সামুয়েল হানিম্যানের হাত দিয়ে জার্মানিতে। কিন্তু বর্তমানে এটি ভারতীয় বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির মধ্যে একটি। অস্ত্রোপচারবিহীন বিকল্প এই চিকিৎসা জটিল রোগ নিরাময়ে যথেষ্ট সাফল্য রয়েছে। জটিল ও দীর্ঘকালীন নানা রোগ মূলধারার অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসায় পুরোপুরি নিরাময় না হওয়ায় ভুক্তভোগী রোগীদের হোমিওপ্যাথির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এছাড়া ক্রমাগত অ্যালোপ্যাথি ওষুধ সেবনের কারণে দেহ অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী হয়ে পড়ার কারণেও অনেকে বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে হোমিওপ্যাথির দ্বারস্থ হচ্ছেন। তারপরেও আসানসোল জেলা হাসপাতালের ক্লিনিক ফ্লপ কেন? কর্তব্যরত চিকিৎসক লক্ষ্মীদেবী এবিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তাঁর বলার অধিকার নেই বলে এড়িয়ে যান তিনি। তবে হাসপাতাল সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, “রোগীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব থেকেই হয়তো রোগী কম হচ্ছে। সচেতনতা বাড়ানো হবে পরিকাঠামোগত উন্নত করা হবে ক্লিনিকটিকে।”
শহরের অন্য এক বেসরকারি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক রামকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা মূলত টিকে আছে ক্রনিক রোগীদের ওপর। সর্দি-কাশি, জ্বরজ্বালা থেকে বাত, মাইগ্রেন, টিউমার জাতীয় রোগীদের রোগ নিরাময়ে লম্বা সময় ধরে চিকিৎসা হয়। কিন্তু হাসপাতালে পাঁচবছর ধরে রোগীরা এসে হয়তো ফিরে গেছেন। তাই রোগীরা অন্য চেম্বারে চলে গেছেন। ধারাবাহিকতার অভাব থেকেই জেলা হাসপাতালের হোমিওপ্যাথি ক্লিনিক রোগীরা আস্থা হারিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত নিয়মিত ও ধারাবাহিক ক্লিনিক খোলা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.