ছবি: প্রতীকী।
দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: ফের অমানবিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকল উত্তরপাড়া (Uttarpara)। তিন দিন ধরে অসুস্থ থাকার পর বুধবার সকালে মৃত্যু হয় এক বৃদ্ধের। সহযোগিতা তো দূর, মৃত্যু সংবাদ পেয়েও করোনা আতঙ্কে তাঁর খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজনটুকুও অনুভব করেননি কেউ। ফলে সারাদিন বাবার দেহ আগলে বসে রইল মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে। পরে সন্ধেয় হুগলির তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদবের উদ্যোগে বৃদ্ধের দেহ উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হয়। পরিজনদের এহেন আচরণে বাকরুদ্ধ সকলে।
জানা গিয়েছে, মৃত পুলক রঞ্জন বেরা অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী। দীর্ঘদিন আগে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সেই থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে ছেলে। এরপর থেকে উত্তরপাড়ার বি কে স্ট্রিটের একটি আবাসনে একমাত্র ছেলের সঙ্গেই বাস ওই বৃদ্ধের। সূত্রের খবর, তিন দিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন পুলকবাবু। প্রতিবেশীদেরও সেকথা জানিয়েছিলেন তিনি। আত্মীয় স্বজনকেও ফোন করেন। কিন্তু কেউই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি বলেই অভিযোগ। মানসিক অবসাদগ্রস্ত ছেলেও বাবার কথা একে-ওকে বলেছেন। কিন্তু কেউই ফিরে তাকাননি। অভিমানে শেষ পর্যন্ত কাউকে বলা ছেড়ে দেন তিনি। অবশেষে বুধবার সকালে কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বৃদ্ধ। তারপর থেকে বাবার দেহ আঁকড়ে ধরে শুধু কেঁদেছে ছেলে, আর বাবাকে ডেকেছে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।
শেষে লোকমুখে খবর পেয়ে হুগলির তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব শ্রীরামপুর মহকুমা শাসককে বিষয়টি জানালে তাঁরই নির্দেশে বুধবার সন্ধেয় উত্তরপাড়া থানার পুলিশ বি কে স্ট্রিটের বাড়ি থেকে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে পাঠায়। শববাহী যানে ওই যখন ব্যক্তির দেহ তোলা হচ্ছে তখন একবারের জন্য প্রতিবেশীরা বাইরে বেরিয়ে তাকে শেষ বিদায়টুকু পর্যন্ত জানায়নি। মানসিক অবসাদগ্রস্ত ছেলের তখন পুলিশের দিকে তাকিয়ে একটাই প্রশ্ন, ‘আমাকে কী বাবার সাথে নিয়ে যাবে?’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.