দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: আশঙ্কা দেখা যাচ্ছিল। এবার তা সত্যি হয়ে উঠল। প্রতিদিন সাপের কামড়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শুধু ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে গত শুক্রবার থেকে সাপে কামড়ানো একশোরও বেশি রোগী ভরতি হয়েছেন। যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে একজনের। বিষধর ও বিষহীন – দু’রকম সাপের উপদ্রব বাড়ছে বর্ষার মরশুমে। ফলে আতঙ্কে স্থানীয় মানুষ থেকে চিকিৎসক – সকলেই।
লকডাউনের কারণে সাপ-সহ বিভিন্ন প্রাণীরা নিরাপদে ঘোরাফেরা করেছে রাস্তাঘাটে। অনুকুল পরিবেশ পেয়ে বেড়েছে তাদের প্রজনন ক্ষমতা। বর্ষার শুরুতেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে সর্পকুল। চারিদিকে বেড়েছে তাদের উৎপাত। বিষহীন ও বিষধর – দু’ধরনের সাপই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গ্রামবাংলায়। গত এক সপ্তাহে শুধু সাপের কামড়ে রোগীর সংখ্যাটা রীতিমত চমকপ্রদ। শুধুমাত্র ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে সন্দেশখালি, বাসন্তী , গোসাবা, ক্যানিং, কুলতলি, জয়নগর এবং বারুইপুর থেকে ১২২ জন সাপে কামড়ানো রোগী ছুটেছেন হাসপাতালে। যাদের অনেককে প্রাথমিক চিকিৎসা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ১২২ জনের মধ্যে বিষধর সাপের কামড় নিয়ে ভরতি হয়েছেন ১২ জন। ৬ জন এখনও ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্য একজনকে কলকাতা চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে চিকিৎসার জন্য।
ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে যে সব রোগী বিষধর সাপের কামড় নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভরতি হচ্ছেন, তাঁদের বেশিরভাগকেই দংশন করেছে কালাচ ও কেউটে। বৃহস্পতিবারও একজন কালাচের দংশন নিয়ে ভরতি হয়েছেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। মৃত্যু হয়েছে একজনের। ক্যানিং মহাকুমার হাসপাতালকে যেহেতু ‘স্নেক বাইট ম্যানেজমেন্ট হাসপাতাল’ হিসেবে রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, তাই রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে এখানে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা তো বটেই, ভিন জেলা থেকেও রোগীরা আসছেন এই হাসপাতালে।
এ বিষয়ে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে সর্প বিশেষজ্ঞ ডক্টর সমর রায় বলেন,”লকডাউন থাকার কারণে সাপেদের অবাধ বিচরণ অনেক বেড়ে গেয়েছিল। তাদের এখন প্রজননের সময়। তার উপর বৃষ্টির জল জমছে বিভিন্ন জায়গায়। তাই বাড়ছে সাপের কামড়। বিশেষ করে সুন্দরবন এলাকায় কালাচের কামড় বেড়েই চলেছে। এখন নিয়ম করে ঘরে কুড়ি বাইশ জন করে রোগী এসে উপস্থিত হচ্ছেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতলে।”
সাপের কামড়ের সঙ্গে পরিবেশের একটা বিরাট ভূমিকা আছে। রাতে বৃষ্টি হলেই কালাচের কামড় সাধারণত বাড়তে থাকে। আবার রোদ-ঝলমল আবহাওয়াতে সাপের কামড় কমে যায়। কালাচ, কেউটে, চন্দ্রবোড়ার মতো বিষধর সাপের পাশাপাশি জলঢোড়া, মেটলি, ঘরচিতা ও দাঁড়াশের কামড় বেড়েছে। কারণ ওঝা বা গুনিনদের উপর ভরসা করছেন না কেউ। বিজ্ঞানসম্মতভাবে এভিএস (AVS) নির্ভরতা বাড়ার জন্য সর্প দংশনের পরও বেঁচে যাচ্ছেন রোগীরা।
এ বিষয়ে দীর্ঘদিনের সাপ নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানকর্মী বিজন ভট্টাচার্য বলেন, প্রতি বছর প্রাক বর্ষার মৌসুমে সাপের কামড়ের ব্যাপক উৎপাত শুরু হয়। এবছর সংখ্যাটা একটু বেশি। বাগানে পরিষ্কার করার সময় চন্দ্রবোড়ার কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিছানায় থাকলে কালাসের কামড় খেতে হচ্ছে। তবে যেহেতু এখনও চাষবাস শুরু হয়নি তাই কেউটের কামড়টা তুলনায় কম।
ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো বিভিন্ন হাসপাতালগুলিতে সাপে কামড়ানোর প্রতিষেধক এভিএস মজুত করা হয়েছে। এভিএস মজুত রাখা হয়েছে ক্যানিংয়ের COVID হাসপাতালেও। কারণ আগামী দিনে আরও বাড়তে পারে সাপে কামড়ে রোগীর সংখ্যা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.