শুভঙ্কর বসু, ঝাড়গ্রাম: নকুলদানা নেই! আছে চিঁড়ে-মুড়ি, ঘুগনি-তরকারি, জল-শরবত। এমনকী শেষ পাতে পানও। চলতি নির্বাচন পর্বে গত কয়েক দফার এই ‘হিট’ মেনুই এবার বাদ পড়ল জঙ্গলমহলের ভোটে। বুথে বুথে লম্বা লাইন। পরিপাটি করে শাড়ি পরা মহিলার দল। সবার হাতে ভোটার কার্ড। মুখে মুচকি হাসি৷
ভোটদানের আনন্দেই দিনভর মশগুল রইল জঙ্গলবাসী। ভুলাভেদা, শিমুলপাল, কাঁকড়াঝোর, ওদলচুয়া, বেলপাহাড়ি, গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম– সর্বত্র একই ছবি। পাশেই ঘাটালের কেশপুরে যখন দিনভর দাপাদাপি চলেছে তখন পুরো ঝাড়গ্রাম জুড়ে খুশির বাতাবরণ। কোথাও দেখা নেই ‘নকুলদানা’-র।
দিনের শেষে বহু হাতড়ে জানা গেল, গোটা কেন্দ্রের সাত হাজার বুথের মধ্যে মাত্র একটি বুথ থেকে অশান্তির খবর মিলেছে। শালবনির মহারাজপুরে ২৩৪ নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। মিনিট কয়েকের মধ্যে মিটেও যায় সবকিছু। কিন্তু ডাকাই, বুড়িঝোড়, কাঁকড়াঝোড়, বগডোবা, ময়ূরঝরনার মতো গ্রাম যেখানে এক সময় ভোটের দিন হেলিকপ্টারে ভোটকর্মী পাঠিয়ে ভোট সারতে হত, সেই লালমাটির শালবনিতেই কি না এমন খুশির মেজাজ!
বাঁ হাতে মুড়ির প্যাকেট। মুখে পান। ভোট দিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন ভিকু মুর্মু। আমায় দেখেই একটা গোলগাল হাসি। ভোট দিলেন? ‘দিলাম। কারে দিলাম সেটাও দেখা গেল। নতুন ব্যবস্থা করেছে এবার।’ একটু এগিয়ে ভুলাভেদা গার্লস স্কুলের বুথটার কাছে পৌঁছাতেই এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখে তাজ্জব বনে গেলাম। বর্তমান ভোট রাজনীতির রেষারেষির বাজারে এ দৃশ্য সত্যিই বিরল৷বুথের বাইরে একটি টেবিলে রাখা মুড়ি আর ঘুগনি। পাহারা দিচ্ছে দুটো বাচ্চা ছেলে। বুথ থেকে এজেন্টরা মাঝেমধ্যে বের হচ্ছেন। যাঁর যখন খিদে পাচ্ছে, এক-দু’মুঠো তুলে নিচ্ছেন। সিপিএম-তৃণমূল-বিজেপি সব দলের এজেন্টের জন্যই এই ব্যবস্থা। “ওরা ভিন্ন দলের এজেন্ট হলেও সবার বাড়ি পাশাপাশি। তাই একসঙ্গে মিলে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।” বুথে পাশে দাঁড়িয়ে জানালেন হিরম টুডু।
একটু এগিয়ে ঢাংকাটি গ্রামে আবার অন্য ব্যবস্থা। বুথ ফেরত ভোটারদের জন্য ভাজা হচ্ছে আলুর চপ, পিঁয়াজি, বেগুনি আর শুশনি শাকের বড়া। এগিয়ে এলেই ভোটারদের হাতে তা ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে গরমাগরম! এদিকে ঝাড়গ্রাম শহরের ভোটের দিনের চিত্রটা ভিন্ন। গোটা শহরে ছুটির আমেজ। রবিবাসরীয় দুপুরে ভাতঘুম দিয়ে দিয়ে ধীরে সুস্থে বুথের দিকে হাঁটা মেরেছেন ভোটাররা। প্রবল দাবদাহে ভয়ে কেউ আবার সক্কাল সক্কাল এভাবেই ভোটের পাট চুকিয়ে ফেলেছেন।
ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের অন্তগত গড়বেতা, শালবনি, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম, বিনপুর ও বান্দোয়ান সবে ভোট মিটেছে শান্তিতে। নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিকেল ছ’টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে প্রায় ৮৩ শতাংশ। একদা ‘মাওভূম’ বলে পরিচিত ঝাড়গ্রাম আসনে এত শান্তিতে ভোট করাতে পেরে বুকের ছাতি রীতিমতো দু’ইঞ্চি চওড়া হয়ে গিয়েছে কমিশনের। রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরের এক কর্মকর্তার কথায়, “মানুষ শান্তিতে ভোট দিয়েছেন, এটাই সাফল্য।”
[অঙ্কের ভীতি কাটাতে রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলে বদলাচ্ছে শিক্ষাদানের পদ্ধতি]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.