শুভঙ্কর বসু: শুনশান ঘন জঙ্গল। শুঁড়ি পথ ধরে এগিয়ে চলেছে একদল ভোটকর্মী। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে সামনেই প্রিসাইডিং অফিসার। কালাশনিকভ হাতে তাদের আড়াল করে নিরাপত্তা রক্ষীর দল। গন্তব্য, মাও অধ্যুষিত একটি ভোটকেন্দ্র। যেখানে না আছে ভোটদাতা। না আছে ভোটকেন্দ্র তৈরির নূন্যতম রসদ। যোগাযোগের একমাত্র ভরসা স্যাটেলাইট ফোন।
টেলি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দণ্ডকারণ্যের এমনই এক ভোটকেন্দ্রে ভোট করার ছবি ধরা পড়েছিল রাজকুমার রাও অভিনীত ‘নিউটন’ সিনেমায়। সিনেমায় অবশ্য সব সম্ভব! কিন্তু বাস্তবের ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় এখনও কি আছে এমন গ্রাম যেখানে এখনও পৌঁছয়নি টেলিফোন?
আছে। এরাজ্যেই রয়েছে এমন বহু গ্রাম, যেগুলি পুরোপুরি টেলি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রকের পেশ করা তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ৪৩৭টি গ্রাম এখনও টেলি যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন। মূলত বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহলের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা প্রত্যন্ত এই গ্রামগুলিতে না আছে ল্যান্ডলাইন ফোন, মোবাইলের তো কোনও প্রশ্নই নেই। টেলি পরিভাষায় এলাকাগুলি এখনও ‘শ্যাডো জোন’ হিসাবে চিহ্নিত। অর্থাৎ, যেখানে টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা আবছায়া হয়েই রয়েছে। পুলিশ বা সরকারি আধিকারিকদের যোগাযোগের ভরসা একমাত্র স্যাটেলাইট ফোন।
[ এজলাসেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা বন্দির, চাঞ্চল্য হুগলি আদালতে ]
২০১১ সালের পর থেকে রাজ্যে তেমন বড়সড় মাও নাশকতার ঘটনা না ঘটলেও মাওবাদী প্রভাবিত রাজ্যগুলির তালিকা থেকে পশ্চিমবঙ্গের নাম এখনও বাদ পড়েনি। এছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, তেলেঙ্গানা ও উত্তরপ্রদেশ রয়েছে তালিকায়। স্রেফ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই এলাকাগুলিতে ভোট করাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। রীতিমতো ‘পাইলট প্রোজেক্ট’ করে এই এলাকাগুলিতে ভোট করানো হয়। কিন্তু তাতেও প্রাণ যায় বহু ভোটকর্মীর।
ঠিক ছিল, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই মাও অধ্যুষিত এই এলাকাগুলিকে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করা হবে। কিন্তু আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে তা আর করে ওঠা সম্ভব নয় বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল। কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রকের পেশ করা তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ৪৩ হাজার ৮৮টি গ্রাম এখনও মোবাইল পরিষেবার বাইরে। যার সিংহভাগই মাওবাদী প্রভাবিত ১০ রাজ্যে অবস্থিত। মাও প্রভাবিত এলাকা বলে চিহ্নিত রাজ্যগুলির ৩০৭৮৭টি গ্রামকে এখনও কোনও মোবাইল টাওয়ারের সঙ্গে যুক্ত করা যায়নি। মাও অধ্যুষিত এই দশটি রাজ্যে ‘তিনটি ফেজে’ মোবাইল সংযুক্তিকরণের কাজ চলছে। মন্ত্রক সূত্রে খবর, প্রথম ফেজ বা পর্যায়ে ১০টি মাও প্রভাবিত রাজ্যের প্রায় আড়াই হাজার গ্রামে মোবাইল পরিষেবা পৌঁছনো গিয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ এখনও শুরু হয়নি। গোটাটাই ডিপিআর তৈরির পর্যায়ে রয়েছে। সূত্রের খবর, এই পর্যায়ে মাও প্রবণ এলাকার আরও ৪ হাজার গ্রামে টাওয়ার বসানো হবে। যার জন্য খরচ ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা।
[ চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার দুই যুবক, ভিনরাজ্যে কাজ হারানোর ভয়ে শ্রমিকরা ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.