সুমন করাতি, হুগলি: কোনি সিনেমা কথা মনে আছে তো? এক সাঁতারুর লড়াইয়ের কাহিনি। আর সঙ্গে কোচ খিদ্দার মারাত্মক পরিশ্রম।সিনেমা জুড়ে ‘ফাইট কোনি ফাইট’ বলে চলেছেন খিদ্দা। হুগলিতে (Hooghly) সেই ‘কোনি’ সিনেমারই বাস্তব কাহিনি। পা দিয়েই চলে লেখা, পা দিয়েই খাওয়া! এমন অনেক জরুরি কাজই সারে হুগলির সায়ন মুর্মু। জন্ম থেকে দুই হাত নেই সায়নের। ছেলেকে নিয়ে মায়ের লড়াই চলছে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে। এখানে ‘খিদ্দা’ স্বয়ং তার মা। সায়নদের বাড়িতে কয়েক মিনিট কাটালে মনে পড়বে জনপ্রিয় ছবি KGF- র সেই সংলাপ, ‘সবচেয়ে বড় যোদ্ধা মা’।
মায়ের ইচ্ছে, বড় হয়ে শিক্ষক হোক ছেলে। আর ষষ্ঠ শ্রেণির সায়ন এখনই সেসব নিয়ে ভাবতে চায় না। পান্ডুয়ার (Pandua) পোটবা গ্রামের দীপঙ্কর মুর্মু এবং প্রতিমা মুর্মুর ছেলে সায়ন মুর্মুর। রানাগড় হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে সে। দাদার সঙ্গে স্কুলে যায় আবার মায়ের সঙ্গে ফিরে আসে সে। হাত নেই, তাই কোনও কাজই একসময় করতে পারত না সায়ন। মা তাকে শিখিয়েছেন, পায়ের আঙুল দিয়ে কীভাবে কলম ধরে কী করে লিখতে হয়, চামচ দিয়ে কী করে খেতে হয়। মা বিলক্ষণ জানেন, ছোটোবেলায় অভ্যাস করালে তবেই শেখা যাবে এসব। তাই নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন তিনি।
জন্মের পর যখন দেখলেন ছেলের দুটি হাত নেই, তখন মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল। তবে ভগবানের সৃষ্টি ধরে নিয়ে সেই মনখারাপ ভুলেছেন। পরিবারের আয় বলতে সামান্য কিছু জমিতে চাষবাস। সেই কাজে স্বামীকে সাহায্য করতে পারেন না প্রতিমা। ছেলের পিছনে সারাদিন সময় চলে যায়। তবে এখনও স্বপ্ন দেখেন প্রতিমা। ছেলেকে বড় করার স্বপ্ন। তিনি বলেন, ‘‘একসময় ভয় হত, ছেলের হাত নেই। বড় হয়ে ও কোনও কাজ করতে পারবে না, থাকতে হবে পরের ভরসায়। তাই যতটা পারছি ওকে তৈরি করার চেষ্টা করছি।’’ ভালোভাবে পড়াশোনা করে শিক্ষক (Teacher) হোক সায়ন, স্বপ্ন মায়ের। বলছেন, ‘‘ওর মনে কোনও দুঃখ নেই। আর আমার বিশ্বাস, আমি এই পরিশ্রমের ফল একদিন পাবই। সবাই ওকে খুব খুব ভালোবাসে।’’
ক্রিস্চিয়ানো রোনাল্ডোর (CR7) ভক্ত সায়ন ভালোবাসে ফুটবল খেলতে। খেলা দেখার পাশাপাশি পড়াশোনায় তার খুব ঝোঁক। বাংলা পড়তে ভালোবাসে। সবসময়ে হাসিখুশি থাকা সায়ন বলছে, ”আগে পড়াশোনা শেষ করি তারপর তো ওসব নিয়ে ভাবব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.