ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: এই জামাইষষ্ঠীতে জামাইয়ের পাতে ইলিশ দিলে জিএসটি মকুব! শুধু ইলিশ কেন? চিংড়ি, ভেটকি, শোল, বান, চাপিলা খাওয়াতে চাইলেও লাগবে না জিএসটি। আরও আছে। ষষ্ঠীর খানা শাশুড়ির সঙ্গে ‘ডেটে’ গিয়ে সারতে চাইলে সমস্ত খাওয়া-দাওয়ার উপর ১০ শতাংশ ছাড়!
জিএসটিও মকুব। শাশুড়ির সঙ্গে খেতে গেলে ১০ শতাংশের ছাড়ও নির্ভেজাল। বলছি ব্যাখ্যা করে। আগে গল্পটা শুনুন।
বিপুল আয়োজনে বাড়িতে রান্না করে খাওয়া-দাওয়ার লেঠা তো চুকেই গিয়েছে। গুচ্ছের অ্যাপ হাতের মুঠোয় আসায় পরিবারের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়া-দাওয়ার পাটও কমেছে। বাঙালির খানাপিনায় এই দুরবস্থার কথা ভাবতে ভাবতেই এমন দিলদরিয়া ভাবনা ভেবে ফেললেন মৎস্য উন্নয়ন নিগমের কর্তারা। অনেকটা গল্পের মতো।
[ তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত আরামবাগ, গুলিতে জখম তৃণমূল নেতা ]
কলকাতা ও লাগোয়া শহর ও শহরতলিতে ইতিমধ্যে নিগমের অ্যাপ যথেষ্ট জনপ্রিয়। অ্যাপ চালু হয়েছে মুর্শিদাবাদেও। যেমন ভাবা, তেমনই কাজ। তাদের অ্যাপেই নিগম জানিয়ে দিল জামাইকে বাড়িতে পাত পেড়ে খাওয়াতে চাইলে এবার আর জিএসটিই নেবে না মৎস্য উন্নয়ন নিগম। এমনকী এও জানিয়ে দিয়েছে, তাদের নলবন ফুড কোর্টে শাশুড়ি যদি জামাইকে আপ্যায়ন করে নিয়ে গিয়ে খাওয়ান, তবে মিলবে ১০ শতাংশ ছাড়।
ষষ্ঠীতে শাশুড়ি যদি জামাইকে খাওয়াতে নিয়ে যান সে তো একরকম ‘ডেট’-ই হল? এই স্নেহের আদরে আর গর্হিত কী থাকে? স্রেফ তো ভূরিভোজের ব্যাপার।
ভাগাড়ের মাংসের আতঙ্কের জেরে অনেকদিনই হল বাঙালি মাছমুখো হয়েছে। সেই সাহসে এপার বাংলা-ওপার বাংলার মেনু ঠিক করতে বসেই নিগমের আধিকারিকরা এমন জিভে জল আনা রসালো মেনুর সঙ্গে জিএসটি মকুবের রসায়নটা পেড়ে ফেলেন। নিগমের এমডি সৌম্যজিৎ দাসের কথায়, “রীতিমতো গবেষণা করে মেনু ঠিক করা হয়েছে। এপার বাংলা ও ওপার বাংলার মানুষের রসনার তৃপ্তির কথাও মাথায় রাখা হয়েছে।” তার সঙ্গেই পেটপূর্তি এই খাবারের সঙ্গে যোগ হয়েছে কিঞ্চিৎ ছাড়ের গন্ধ! আর তাতেই মাত বাঙালি।
[ নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে পুলিশের জালে তান্ত্রিক বাবা ]
থালির উপর শতাংশের ছাড় তো নয় বোঝা গেল। জিএসটি মকুবটা হচ্ছে কী করে? আরেক আধিকারিক একটু গোপনীয়তা রেখেই জানালেন, “৪০০ থেকে ৬০০ টাকার মেনু ঠিক হয়েছে। তার মধ্যে মৎস্য দপ্তরের লাভের অংশ তো আছেই। হিসেব-নিকেশ করেই বাকি ছাড়টুকু এবার শাশুড়িদের জন্য রাখা হয়েছে। এক্কেবারে হিসেবের কড়ি গোনা।”
সদ্য আপডেট হয়েছে মৎস্য দপ্তরের ‘স্মার্ট ফিশ’ অ্যাপ। এপার বাংলার মেনুতে ভাতের সঙ্গে রাখা হয়েছে কলাইয়ের ডাল, মৌরলা মাছ ভাজা, পোস্তর বড়া, পেঁপে-চিংড়ি ঘণ্ট। থাকছে গলদা চিংড়ির মালাইকারি, আমবড়ি দিয়ে ল্যাটা মাছের টক, ভেটকির ঝাল, শোল কিংবা বাণ মাছের কষা, ট্যাংরার টক। শেষ পাতে চাটনি, পাঁপড়, আর মিষ্টি। ওপার বাংলার মেনুও লাজবাব। ভাতের সঙ্গে মুগ ডাল, চাপিলা মাছ ভাজা, কুচো চিংড়ির বড়া। তার পর ইলিশের মাথা দিয়ে কচু শাক, কচুর লতি দিয়ে ইলিশ, পোয়া মাছের পাতুরি, পাঁচফোড়ন দিয়ে কাতলা ভুনা, পালং-সরষের সরপুঁটি, লাউ পাতায় কই মাছের ভর্তা, টক-মিষ্টি ইলিশ। এই টক-মিষ্টি ইলিশে আঁশ ছাড়ানো মাছটিকে গরম জলে ধুয়ে সাফ করে কাঁচা রেখেই ছাড়া হবে তেঁতুলের টকে। শেষ পাতে চাটনি, পাঁপড় ও মিষ্টি।
হিমসাগর-ল্যাংড়াও ওদিকে বাজার মাত করে দিয়েছে। খাসা চেহারা নিয়ে হাজির কাঁঠাল-লিচুও। নিগমের মেনুতেও আছে সেসব। সঙ্গে জিএসটি ছাড়ের এই চাঞ্চল্যকর খাবারের মেনুতে আলাদা স্বাদ এনে দেবে পদ্মা বা মেঘনার ইলিশ। এপার বাংলার তৃপ্তি আবার চিংড়িতে।
শেষ পাতে জিএসটির মধুরেণ সমাপয়েত!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.