ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: এত বড় দুর্ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্যে ঘটেনি। অথচ পাঁচজনের পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু আর শ’য়ে শ’য়ে মানুষের জীবন-মরণের টানাটানির পরও না হল কোনও শোকজ, না কোনও সাসপেনশন। কচুয়াতে প্রশাসনের নজরদারির অভাব ছিল। ছিল আয়োজক কমিটির গাফিলতি আর মন্দিরে ঢোকার রাস্তায় থাকা পুকুরের ধারে দোকান ভাড়া দেওয়ার মতো অপরাধ। সেই কারণেই যে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে তা খোলা চোখেই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু, এই পাঁচটি জীবনের দায় যাঁদের উপর বর্তায়, তাঁরা বহালই রয়েছেন।
জন্মাষ্টমীর রাতের সেই ভয়াবহ স্মৃতি ভুলে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। এবার কচুয়াধামের পরিকাঠামো উন্নয়নের দায়ভার নিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কচুয়ার মন্দির কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী বছর জন্মাষ্টমী উৎসবের আগে কচুয়ায় পুণ্যার্থীদের সুরক্ষার জন্য যাবতীয় পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। যার প্রথম ধাপ হবে মন্দিরে ঢোকার রাস্তার সম্প্রসারণ। কারণ এই রাস্তাই বৃহস্পতিবার রাতে বিপর্যয় নেমে আসার পথ তৈরি করে দিয়েছিল। আর তাতে যজ্ঞে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছিল পুকুরপাড়ের বিপজ্জনক দোকানগুলি।
কচুয়ায় উৎসবের আগে জেলা প্রশাসনের কর্তারা একাধিকবার বৈঠক করেছিলেন বলে দাবি তাঁদের। অথচ মন্দিরে ঢোকার রাস্তায় যে এত বড় বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে তা কারও নজরে এল না। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনিক মহলেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বিডিও কীভাবে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন। প্রশাসনের নিচুস্তরে যে নজরদারির অভাব ছিল, তা ঠারেঠোরে মেনে নিয়েছেন জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারা। কিন্তু, সেই গাফলতির শাস্তি কেন হল না সে বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি কেউ। এই ঘটনার পর থেকে জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী একেবারেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কোনও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে রাজি হননি তিনি। এমনকী ফোনেরও জবাব দেননি।
পুলিশের দাবি, পুকুরধারে ওই দোকানগুলি না রাখার জন্য বলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু, পুকুরের মালিক ও মন্দির কমিটির সদস্যরা তা করতে দেননি। মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বক্তব্য, “পুকুরের ধারে দোকান ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে বসিরহাট জেলা পুলিশ একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে। আইনি প্রক্রিয়াতেই তদন্ত হবে। দোষ প্রমাণ হলে শাস্তিও পাবে।” তবে ওই পুকুরের মালিক একা নন, যাঁদের উপর নজরদারির দায়ভার ছিল তাঁরাও সমদোষী বলে অভিযোগ মৃতদের পরিজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। সেই প্রশাসনিক আধিকারিক আর মন্দির কমিটির বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
রবিবার মন্দির কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন মন্ত্রী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।ছিলেন বসিরহাটের পুলিশ সুপার-সহ অন্যান্য কর্তারা। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “মন্দির ঢোকার রাস্তাটি খুবই সংকীর্ণ। প্রথম পদক্ষেপ হবে সেটিকে চওড়া করা।” পরিকল্পনা অনুযায়ী, সোমবার কচুয়ায় যাচ্ছেন পূর্ত দপ্তর ও জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা। রাস্তা জন্য ডিপিআর তৈরি হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দশেক আগে রাস্তাটি এত সংকীর্ণ ছিল না। ধীরে ধীরে পুকুরের মধ্যে ধসে গিয়েছে রাস্তার একাংশ। সমস্যার সমাধানে নিজের জমি থেকে রাস্তার জন্য ২০ ফুট ছেড়েছিলেন সরোজ কৌশিক নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। জন্মাষ্টমীর রাতে তাঁর বাড়ির পাঁচিলটিই ভেঙে পড়েছিল। সূত্রের খবর, ওই পুকুরটির বেশ কয়েকজন অংশীদার রয়েছেন। রাস্তার জন্য পুকুরের কিছু অংশ ছাড়তে রাজি হয়েছেন তাঁরা।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, পুকুরটি সংস্কার করা হবে। লোহার উঁচু ব্যারিকেডও দেওয়া হবে। একই সঙ্গে মন্দির চত্বরের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য আর্থিকভাবেও সাহায্য করার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.