সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ‘ভূত’ দর্শনে আশাভঙ্গ অত্যুৎসাহীদের। চতুর্দশীতেও অশরীরীদের উপস্থিতি টের পাওয়া গেল না। বিজ্ঞানমনস্ক বেগুনকোদরের কাছে আবারও হার মানতে হল ‘ভূত’ কারবারিদের। মুখ পুড়ল ‘ভূত’–এর অস্তিত্ব নিয়ে গুজব রটানো মানুষজনের।
শনিবার ভূতচতুর্দশীর দিনে প্রায় হঠাৎ করেই পুরুলিয়ার কোটশিলা থানার বেগুনকোদরে ‘ভূত ভূত’ রব উঠে যায়। যার জেরে ওড়িশার গঞ্জাম জেলা প্রশাসনের পথ অনুসরণ করে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া কেন্দ্র সোশ্যাল সাইটে ঘোষণা করে দেয়, ভূত দেখাতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে বিজ্ঞান মঞ্চ সোশ্যাল সাইটে এও জানিয়ে দেয়, ভূত দেখাতে ব্যর্থ হলে, ৫০০ টাকা গ্রামবাসীদের দিয়ে, ক্ষমা চাইতে হবে। বিজ্ঞান মঞ্চ এমন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতেই ‘ঘোস্ট ট্যুরিজম’ কারবারিরা চাপে পড়ে যান।
গত শনিবার বিকালে আবার বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া কেন্দ্র আবার ওই স্টেশনে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে ভূতের অস্তিত্ব সংক্রান্ত গুজব বন্ধ করার বার্তা দিয়ে পোস্টার দেন। আবার নতুন করে যাতে ‘ভূত’ কারবারিরা এই স্টেশনে এসে গুজবে হাওয়া না দিতে পারে, তাই স্থানীয় বাসিন্দারা পরিকল্পনা করে শনিবার সেখানেই রাত জাগেন। এমনকী কোটশিলা থানার পুলিশও বেগুনকোদর স্টেশনে ভূতের অপপ্রচার রুখতে টহল দেয়।
রবিবারও কালীপুজোর অমাবস্যার রাতেও ভূতের গুজব ওড়াতে রাত জাগার পরিকল্পনা রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া কেন্দ্রের সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, “আর কিছুতেই আমরা বেগুনকোদর স্টেশনকে ‘ভূতুড়ে’ বানাতে দেব না। ‘ভূত ভূত’ আবহ তৈরি করলে ‘ভূত’ পর্যটন কারবারীদের মুনাফা হবে। কিন্তু স্টেশনে ট্রেন না থামলে এলাকার মানুষজনের যোগাযোগে যেমন
সমস্যা হবে, তেমনই গ্রামীণ অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। আর এই বিজ্ঞানের যুগে এসব অশরীরীর ধারণা কেনই বা বরদাস্ত করব?”
২০১৭ সালের ডিসেম্বরেও পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই বিজ্ঞান মঞ্চ এই স্টেশনে রাতের পর রাত জেগে ‘ভূত’-এর ভয় ভাঙায়। তারপর থেকে রাতের ট্রেনগুলিও এই স্টেশনে দাঁড়ানো শুরু করে। শনিবার স্থানীয়দের সঙ্গে রাত জাগার কাজে যুক্ত থাকা চা বিক্রেতা বাবলু কুমার বলেন, “আবার প্রায় হঠাৎ করেই বেগুনকোদর স্টেশনে ‘ভূত ভূত’ বলে চাউর করা হচ্ছে। যারা এই গুজব রটিয়ে আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিকে ধাক্কা দিতে চাইছেন, তারা কিন্তু আবারও ভুল করছেন। দু বছর আগের মত ভূত চতুদর্শীতেও এখানে রাত জেগে আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি যে ‘ভূত’ বলে কিছু নেই।”
কিন্তু বেগুনকোদরই ‘ভূত’দের বাসস্থান, সেই ধারণাটা এল কোথা থেকে? গল্পটা হয়ত অনেকেরই জানা। ১৯৬০ সালে এই স্টেশন তৈরির ছ’বছর পরে স্টেশন মাস্টার ও তাঁর স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তখন থেকেই এখানে ‘ভূত’ আছে বলে সেই সময় রটনা শুরু হয়ে যায়। তারপর এই স্টেশনই বন্ধ করে দেয় রেল। ২০০৬ চালে চালু হওয়ার পর আর বেগুনকোদর চায় না অতীতের কালো দিন ফিরে আসুক। তাই এখন
অশরীরী ছায়ামূর্তিদের বিরুদ্ধেই লড়াই বিজ্ঞানমনস্ক বেগুনকোদরের।
ছবি: অমিত সিং দেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.