ছবি: শান্তনু দাস
সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: দেউচা পাচামিতে কোনওভাবেই জোর করে জমি অধিগ্রহণ হবে না। কোনওভাবেই কাউকে উচ্ছেদও করা হবে না। প্রকল্পের জন্য যে জমি প্রয়োজন সেটা কিনে নেওয়া হবে সরকারের তরফে। দরকারের এক ফোঁটাও বেশি নেওয়া হবে না। শনিবার সাঁওতাল সংগঠনের ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যের তরফে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হল। জানানো হয়, যেহেতু ওপেন কাস্ট মাইনিং ওখানে হচ্ছে না, তাই ওই এলাকায় উচ্ছেদের কোনও প্রশ্ন নেই। এদিনই কয়লা প্রকল্প এলাকার গ্রামের নির্বাচিতদের নিয়ে যে কোনও সমস্যা মোকাবিলায় তৈরি হল সমন্বয় কমিটি। শনিবার মহম্মদবাজার ব্লক অফিসে এসআরডিএ-র চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল, বিডিও অভিষেক মিশ্র, ওসি তপাই বিশ্বাসের উপস্থিতিতে ৩০ জনের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়।
গতমাসে সাগরবান্দি গ্রামের নানা দাবির জেরে ৩ দিন কিছু কাজ বন্ধও ছিল। মহম্মদবাজারে দিশম আদিবাসী গাঁওতার রাজ্য সম্মেলনেও কমিটি গড়ার দাবি উঠেছিল। দেউচা নিয়ে সরকারের মনোভাব স্পষ্ট করতে এদিন রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর পি বি সেলিম এবং বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বৈঠক করেন সাঁওতাল সংগঠনের ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। পরে সাংবাদিক সম্মেলন করে পি বি সেলিম বলেন, “দেউচা পাচামি নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে কিছু বিষয়ে ছড়ানোর জন্য। সেই অসঙ্গতি (কনফিউশন) দূর করতেই বৈঠক। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের সবথেকে বড় গোষ্ঠীকে নিয়ে বৈঠক হল। তাঁদের বলা হয়েছে, যে জমি প্রয়োজন সেটা কিনে নেওয়া হবে রাজ্যের তরফে। প্যাকেজে যাঁরা সন্তুষ্ট হবেন তাঁরা লিখিতভাবে সরকারকে সেই বার্তা দিলে সরকার তাঁদের জমি কিনে নেবে। যাঁরা লিখিতভাবে জানাবে না তাঁদের থেকে জমি নেওয়া হবে না।”
একইসঙ্গে সরকার যে কোনওরকম উচ্ছেদের বিরোধী তাও স্পষ্ট করা হয়। সেলিম বলেন, “ওখানে ওপেন কাস্ট মাইনিং-এর কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই। তাই উচ্ছেদেরও প্রশ্ন নেই। আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং হবে।” সেলিম বলেন, “কেউ কেউ ছড়িয়ে দিচ্ছিল ১০ হাজার থেকে ১৪ হাজার একর জমি দরকার। আমরা সংগঠনকে জানিয়েছি, ৩ হাজার ৪০০ একর জমি নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সাঁওতালদের খুব প্রিয় মহুয়া গাছ বা অর্জুন গাছ কাটা হচ্ছে বলে অনেকে বলছেন। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি যে একটাও গাছ কাটা হচ্ছে না। গাছগুলো অন্যত্র বসিয়ে দেওয়া হবে।” পাশাপাশি রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান জানান, “এক-দেড় মাস অন্তর আমরা বৈঠকে বসব।” সেলিম বলেন, “একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল, আশা করি সেটা অনেকটাই কাটানো গিয়েছে।” বৈঠক শেষে সংগঠনের অন্যতম নেতা বৈদ্যনাথ হাজরা, সুখচাঁদ সোরেন বলেন, “কিছু বিষয় অস্পষ্ট ছিল। সমাজমাধ্যম, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে অনেক কিছু বলা হচ্ছিল। তৈরি হচ্ছিল বিভ্রান্তি।”
এদিকে, সমন্বয় কমিটি প্রশ্নে দিশম গাঁওতার রাজ্য সভাপতি রবীন সোরেন বলেন, “এটা দাবি ছিল। এলাকার উন্নয়ন, সমস্যা, সব নিয়ে মাসে দু’বার আমরা প্রশাসনের সঙ্গে বসব। পরের বৈঠক জেলা আধিকারিকদের উপস্থিতিতে হবে।” হিংলো গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শিবদাস দাস বলেন, “আমরা প্রকল্প চাই। বহিরাগতরা এসে ভুল বোঝাচ্ছে। সেই বার্তা প্রশাসনকে দিতে পারছি না। রাস্তা, জল, আলো নিয়ে উন্নয়নের দাবি জানাতে পারছি না। এই কমিটি গ্রামের মানুষের সঙ্গে প্রশাসনের সমন্বয় গড়ে তুলবে।” বিডিও অফিসে বৈঠকে অনুব্রত সরকারের চাহিদা, মানুষের প্রয়োজনীয়তা ও কমিটির গুরুত্ব বোঝান। হিংলো, চান্দা, ভাঁড়কাটা, সাগরবান্দি, মথুরা পাহাড়ির গ্রাম থেকে বিশেষ কয়েকজনকে নিয়ে লোকাল কমিটিও গঠন করা হয়। এঁরা সমস্যা হলেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশাসনের পাশে দাঁড়াবে। রবি টুডু জানান, “আধার কার্ড জাতিগত শংসাপত্র-সহ যা যা সমস্যা আছে তা দূর করতে সরকারকে জানাবে এই কমিটি। এই কমিটি প্রকল্পকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবে।” অনুব্রত মণ্ডল জানান, “এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা, উন্নয়ন, বহিরাগতদের প্রতিরোধে কমিটি গঠন। এরাই প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.