দেবব্রত দাস, পাত্রসায়র : বাঁকুড়ার মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ-কে নিয়ে এবার বিপাকে পড়েছেন দলের কর্মী, সমর্থকরা। বুধবার হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ছ’সপ্তাহ বাঁকুড়া জেলায় ঢুকতে পারবেন না সৌমিত্র। এদিকে জেলায় পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে ভোটের প্রচার। তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার শুরু করে দিয়েছে। প্রচারে যদিও শাসকদলের থেকে বেশ কিছুটা হলেও পিছিয়ে বিজেপি৷ এরই মধ্যে ফের হাই কোর্টের নির্দেশে মাথায় হাত পড়েছে বিষ্ণুপুরের পদ্ম শিবিরে। এই অবস্থায় প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে কীভাবে প্রচার-সহ নির্বাচনী কাজকর্ম সামলানো হবে তা নিয়ে সংশয়ে বিজেপির নিচুতলার কর্মী—সমর্থকরা।
মাস কয়েক আগে শাসকদল ছেড়ে বিজেপিতে আসা সৌমিত্রবাবুকেই এবার বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁর বাঁকুড়া জেলায় ঢোকায় কিছুদিন আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা ছিল। বুধবার হাইকোর্ট ফের তাঁকে আরও ছ’ সপ্তাহ বাঁকুড়া জেলায় না ঢুকতে নির্দেশ জারি করেছে। অথচ আগামী ১২ মে এই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ করা হবে। হাতে বিশেষ সময় নেই। তারই মধ্যে প্রার্থী যদি এলাকায় না থাকেন তাহলে কীভাবে প্রচার সম্ভব তা নিয়ে বিপাকে বিজেপি কর্মীদের একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এক জেলা নেতা বলেন, “সাতটি বিধানসভা নিয়ে একটি লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন হয়। সেখানে প্রার্থীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। সশরীরে প্রার্থী হাজির না থাকলে ভোট প্রচারের বিষয়টি কেমন অগোছালো হয়ে যায়। তারপর তৃণমূলের সন্ত্রাস তো রয়েছে। তাই সৌমিত্রবাবু যদি প্রচারে না থাকেন তাহলে ভোটবাক্সে কিছুটা হলেও প্রভাব তো পড়বেই।” বিজেপির বিষ্ণুপুর জেলা সাংগঠনিক সভাপতি স্বপনকান্তি ঘোষ অবশ্য বলেন, “দলের কর্মীরা মোটেই হতাশ নন, আমাদের দলে একটা নীতি আদর্শ রয়েছে। সেটা মেনেই দলীয় কর্মীরা ভোট প্রচারের কাজ করবেন। তবে প্রার্থী না থাকলে অসুবিধা তো কিছুটা হবেই। শেষ পর্যন্ত কী হয় তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আর এ সম্পর্কে বিষ্ণুপুরের বিদায়ী সাংসদ সৌমিত্রবাবু বলেন, “আদালতের নির্দেশের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। এ ব্যাপারে দলীয় স্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
২০১১ সালে কোতুলপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী হিসাবে জয়ী হয়েছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেতা সৌমিত্র খাঁ। পরে অবশ্য তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৪ সালে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন সৌমিত্রবাবু। এরপর জেলা রাজনীতিতে অনেক জল গড়িয়েছে। দিনের পর দিন দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েন বিষ্ণুপুরের এই সাংসদ। অবশেষে গত জানুয়ারি মাসে তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তাঁর বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ আত্মসাৎ, বালিচুরি, তোলাবাজির মতো বেশ কয়েকটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁর এই জেলায় ঢোকা আপাতত নিষিদ্ধ। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি জেলার বাইরে রয়েছেন। এই অবস্থায় বিজেপি অবশ্য তাঁকেই বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের জন্য প্রার্থী করেছে। কিন্তু প্রার্থী হলেও জেলার বাইরে থেকে তিনি কীভাবে প্রচারের সবদিক সামলাবেন তা নিয়েই কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ছবি : সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.