ছবি: প্রতীকী
ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: কোভিড (COVID) না স্বাভাবিক মৃত্যু? মূলত, এই বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় রাজ্যের দুটি সরকারি আই ব্যাংকে কর্নিয়া কার্যত শূন্য। ফলে রোগী এলেও কর্নিয়ার অভাবে ফিরে যেতে হচ্ছে তাঁদের। অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা হচ্ছে না।
মার্চের শেষ সপ্তাহে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক মৃতদেহ থেকে কর্নিয়া (Cornea) সংগ্রহে সাময়িক বিধিনিষেধ আরোপ করে। কারণ, যানবাহন বন্ধ। মৃত ব্যক্তির চোখ ৯৬ ঘন্টার মধ্যে তা প্রতিস্থাপন অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। তবে আগস্টে সেই বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হয়। নতুন নিয়ম জারি হয়েছে। বলা হয়েছে, মৃত ব্যক্তির থেকে কর্নিয়া সংগ্রহের আগে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক লিখিত জানাবেন ওই ব্যক্তির করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়নি। তবেই কর্নিয়া সংগ্রহ করা যাবে। রাজ্যের একমাত্র চক্ষু উৎকর্ষ কেন্দ্র রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথালমোলজি (আরআইও)–র অধিকর্তা অধ্যাপক ডা অসীমকুমার ঘোষের কথায়, “আগে ফি মাসে গড়ে ১৫০-২০০ মানুষের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন (গ্রাফটিং) করা হতো। টানা সাত মাস সেই কাজ থমকে।” দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, “রোগী এসে ফিরে গেলেও কর্নিয়ার অভাবে কিছু করা যায়নি। তবে অক্টোবর থেকে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে।”
একই অভিজ্ঞতা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের আই ব্যাংকের। তবে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ বা এস এসকেএম হাসপাতালে বেসরকারি আই ব্যাংকের সহযোগিতায় কর্নিয়া সংগ্রহ করে প্রতিস্থাপন হচ্ছে। এমনও হয়েছে বেসরকারি আই ব্যাংক থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ করে আরআইও–র রোগীর চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন হয়েছে। আরআইও–র আধিকারিকদের কথায়, হাসপাতাল বা বাড়িতে রোগীর মৃত্যুর পর তার লালারস সংগ্রহ করে কোভিড পরীক্ষা করে চিকিৎসকের টেবিল পর্যন্ত পৌঁছতেই ছ’ ঘন্টার বেশি সময় চলে যায়। তাই ইচ্ছে থাকলেও অনেক পরিবার এই সময় মৃত পরিজনের চোখ দান করতে পারছে না। তাই সমস্যা রয়েই যাচ্ছে।
চক্ষু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মৃত ব্যক্তির যদি মৃদু বা উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ হন তবে সেই ঝুঁকি কে নেবে? ফলে সমস্যা রয়েই গেছে। স্বাস্থ্যদপ্তরের তথ্য বলছে, রাজ্যে অন্তত ৩ লক্ষ মানুষ কর্নিয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছেন। তথ্য আরও বলছে, ফি বছর রাজ্যে কম করে সাড়ে ১২ হাজার মানুষ অন্ধত্বের শিকার হচ্ছেন। এঁদের জীবনে আলো জ্বালাতে পারে একটি কর্নিয়া। দেশে বছরে অন্তত ৮৫-৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। রাজ্যে বছরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় প্রায় ৭ লাখ মানুষের। চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ ও শ্রীরামপুর চক্ষু ব্যাংকের প্রধান ডা কামাখ্যা মজুমদারের কথায়, “এই মৃত ব্যক্তিদের শতকরা ২জনের কর্নিয়া সংগ্রহ করা হলে রাজ্যের চাহিদা মিটিয়ে ভিন রাজ্যের অন্ধ মানুষের জীবনকে আরও সুন্দর করা যেত।” নবান্ন সূত্রে খবর, আগামী জানুয়ারিতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে আরও একটি সরকারি আই ব্যাংক কাজ শুরু করবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.