রাজ্যে একের পর এক বিভিন্ন স্কুলে মিড-ডে মিলের বেহাল দশার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। কোথাও আবার দেখা গিয়েছে নিজেদের গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে খুদেদের পেটভরে খাওয়াচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। কী অবস্থা রাজ্যের বাকি স্কুলগুলির? চালচিত্র দেখতে পৌঁছে গেল সংবাদ প্রতিদিন.ইন।
নবেন্দু ঘোষ, বসিরহাট: খাতায় কলমে রয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। পড়ুয়াও রয়েছে। কিন্তু নেই কোনও ঘর। ফলে দিনের পর দিন নদীর পাড়ে ত্রিপল টাঙিয়েই চলছে মিড-ডে মিল রান্না। সেই কারণেই বিপদের আশঙ্কা করে খুদেদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করেছে অনেকেই। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি বদলায়নি। বরং বছরের পর বছর এইভাবেই চলছে বসিরহাটের হিঞ্জলগঞ্জের বাইলানি আদিবাসীপাড়ার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র।
হিঞ্জলগঞ্জে নদীর পাড় ঘেঁষে ঢালাই রাস্তা চলে গিয়েছে বাইলানি বাজারের দিকে। সেই রাস্তার গাঁ ঘেষে টাঙানো রয়েছে ত্রিপল। সেটাই খাতায় কলমে বাইলানি আদিবাসী পাড়ার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। কিন্তু সেখানে নেই কোনও ঘর, রান্নার জায়গা এমনকী জলের ব্যবস্থাও। নামে একটি শৌচাগার রয়েছে কিন্তু সেখানে দরজা নেই। ফলে তা ব্যবহারের অযোগ্য। আর এই প্রতিকুলতার কারণেই পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীর পাড়ে সন্তানদের পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন অধিকাংশ গ্রামবাসীই।
শনিবার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পৌঁছতেই দেখা গেল হাত, পা গুটিয়ে বসে রয়েছেন কয়েকজন কর্মী ও সহায়িকা। এর কিছুক্ষণ পার হতেই নজরে পড়ল খুদেদের সঙ্গে নিয়ে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে হাজির হচ্ছেন কয়েকজন অভিভাবক। নির্দিষ্ট সময়ে কেন সন্তানকে স্কুলে পাঠাননি কেন জিজ্ঞেস করতেই এক অভিভাবক বললেন, “এখানে কোনও ঘর নেই। শৌচাগার নেই। খোলামেলা জায়গা। রাস্তা দিয়ে সবসময় গাড়ি চলছে সেইসঙ্গে রয়েছে নদী। তাই দুর্ঘটনার ভয়ে সন্তানদের পাঠাই না স্কুলে। তাই শুধু খাবার নিতে আসি।” সেইসঙ্গে তিনি এবিষয়ও নিশ্চিত করেন যে পরিকাঠামো উন্নত করলে নিশ্চয়ই বাচ্চাকে পাঠাবেন সকলেই।
এপ্রসঙ্গে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী কমল মণ্ডল বলেন, “আমরাও মায়েদের জোর করতে পারি না বাচ্চাকে পাঠানোর জন্য। কারণ, এখানে নানান বিপদ তাই কোন দূর্ঘটনা ঘটে গেলে সব দায় এসে পড়বে আমাদের ঘাড়ে।” সমস্যা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা মিতা মণ্ডল বলেন, “এখানে একটা জলের ব্যবস্থা নেই। দূর থেকে বয়ে বয়ে আনতে হয় সব কাজে ব্যবহৃত জল। বর্ষাকালে অধিকাংশ দিনই বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখতে হয় রান্না। কখনও আবার দেওয়া হয় শুকনো খাবার।” অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে হিঞ্জলগঞ্জের প্রত্যন্ত ওই গ্রামে ধুঁকছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.