রাজ্যে একের পর এক বিভিন্ন স্কুলে মিড-ডে মিলের বেহাল দশার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। কোথাও আবার দেখা গিয়েছে নিজেদের গাঁটের কড়ি খরচ করে খুদেদের পেটভরে খাওয়াচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। কী অবস্থা রাজ্যের বাকি স্কুলগুলির? চালচিত্র দেখতে পৌঁছে গেল সংবাদ প্রতিদিন.ইন।
চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: রান্নাবান্না, খাওয়াদাওয়া, পঠনপাঠন সব কিছুর জন্য একটি মাত্র ঘর। সেই ঘরটিও আবার পাড়ার ক্লাবের। সেখানেই দিনের পর দিন চলছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। ফলে প্রায় দিনই পাড়ার লোকেরা ক্লাবের ঘর ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। মাঝে মধ্যেই তালা পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় শিশুদের পঠনপাঠন, মিড-ডে মিল। আবেদন নিবেদন করে খোলা হয় ক্লাব ঘর। ফের চালু হয় অঙ্গনওয়াড়ি। এই ভাবেই চলছে জামুড়িয়ার বাহাদুর পঞ্চায়েতের চৌকিডাঙা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। পুজোর মুখে ফের ক্লাব কর্তৃপক্ষ চাপ দিচ্ছে ঘরটি ছেড়ে দিতে। আর এতেই বিপাকে পড়েছেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা।
আসানসোলের জামুড়িয়ার বাহাদুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চৌকিডাঙা আদিবাসী গ্রামে দেখা মিলবে এই আইসিডিএস সেন্টারটির। এখানে নেই বিদ্যুৎ, নেই পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থাও। অভিযোগ, গ্রামে পাঁচটি টিউবওয়েল থাকলেও চারটি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। ফলে পানীয় জলের জন্য নির্ভর করতে হয় পুকুরের উপর। গ্রামে কোনও পাকা রাস্তা না থাকার ফলে বর্ষাকালে চলার অযোগ্য হয়ে পড়ে। আর এই একাধিক সমস্যার মধ্যেই কোনওরকমে চলছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি।
ওই কেন্দ্রের সহায়িকা চিন্তা মণ্ডল বলেন, “স্থানীয়রা ক্লাব ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। ফলে কবে সেন্টার বন্ধ হয়ে যাবে সেই আতঙ্কেই রয়েছি।” তিনি জানান, ছোট্ট ক্লাবে একটি মাত্র ঘর থাকায় বর্ষাকালে সেখানেই রান্না করতে হয়। তার পাশেই চলে পঠনপাঠন। ফলে ধোঁয়ায় বাচ্চাদেরকে ঠিকঠাক পড়ানো সম্ভব হয় না। প্রায় দিনই ধোঁয়ায় পঠনপাঠন ভণ্ডুল হয়ে যায়। শিশুরাও ক্লাসে থাকতে চায় না। অভিভাবকদের মধ্যে টুম্পা মণ্ডল, সোনিয়া সোরেন বলেন, বর্ষাকালে এই সমস্যা আরও বাড়ে। যেখানে কয়লা, ঘুঁটে, কেরোসিন সেখানেই লেখাপড়া আবার সেখানেই চলে খাওয়াদাওয়া। এতটাই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
গ্রামের এক মোড়ল বলেন, ক্লাব ঘরটি কিছুদিনের জন্য নিয়েছিল সরকার। বলেছিল তাড়াতাড়ি সেন্টার করে দেওয়া হবে। কিন্তু কয়েকবছর ধরে পাড়ার ক্লাব ঘরটি আটকে রেখেছে। এ প্রসঙ্গে জামুড়িয়ার পঞ্চায়েত সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সমস্যা রয়েছে। সেন্টারের নিজস্ব ভবন না থাকায় সমস্যার কথা আমরা জানিয়েছি জেলা পরিষদ ও ব্লক অফিসে। বিডিও জানিয়েছেন নতুন বাড়ি শীঘ্রই তৈরি হবে। তার রূপরেখাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু কতদিনে তা বাস্তবায়িত হবে সেই অপেক্ষায় গ্রামবাসীরা।
ছবি: মৈনাক মুখোপাধ্যায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.