নিজস্ব সংবাদদাতা,বনগাঁ: কাঠের পাটাতনে পেরেক পোঁতা দীর্ঘ এক সাঁকো। নিচে গভীর জলাভূমি। জানা গেল, শিলান্যাস হয়েও তৈরি হয়নি উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার রাঘবপুর সেতু। এখন ভোটের মুখে ড্যামেজ কন্ট্রোলে বাঁশ সরিয়ে কাঠের তক্তা লাগানো হয়েছে। তাতে আরও ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। আর এবার ভোট চাইতে গ্রামমুখো হচ্ছেনও না প্রার্থী, নেতারা। গ্রামবাসীদের কারও সঙ্গে দেখা হয়ে গেলেও, মুখ লুকিয়ে সরে যাচ্ছেন সব দলের নেতাই। এমনই অভিযোগ শোনা গেল গ্রামে গিয়ে৷
বাগদা থানা এলাকার সিন্দ্রানি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সিন্দ্রানি বাওড়ের উপর রাঘবপুর,কমলাবাস-সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে ওপারে। গ্রামগুলির তিনদিক ঘিরে রয়েছে বাওড়৷ ফলে গ্রামের হাজার দুয়েক মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম প্রায় ১৫০ মিটার লম্বা রাঘবপুর সেতু। গ্রামগুলি থেকে স্কুল, কলেজ, হাট, বাজার,হাসপাতাল-সহ প্রয়োজনে একমাত্র মাধ্যম এই বাঁশের সেতুটিই। অতীতে সেতুর পচা বাঁশ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয় এক কৃষকের কথায়, ‘বাজারে সবজি নিয়ে যেতে আমাদের একমাত্র মাধ্যম এই নড়বড়ে ব্রিজ৷ কোনও দুর্ঘটনা ঘটলেই পঞ্চায়েত এসে বাঁশগুলো পালটে দিয়ে যায়।” গৃহবধূ সুষমা মণ্ডল বলেন, ‘গ্রামে স্কুল নেই৷ বাড়ির ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতেই সেতু পারাপারের কথা ভেবে চিন্তায় থাকি৷’ নীলিমা বিশ্বাসের কথায়, ‘অতীতে সব রাজনৈতিক দল এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিল৷ ভোট আসলেই দলে দলে আসতেন নেতারা৷ প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যেত।’ তবে এবারই ব্যতিক্রম৷ সামনেই লোকসভা ভোট, তা সত্ত্বেও এবার কোনও বড় নেতা বা প্রার্থীকে দেখা যাচ্ছে না এলাকায়।
স্বাধীনতার পর থেকে এই গ্রামগুলির বাসিন্দারা একটি কংক্রিট সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন। সেতুর দাবিতে তাঁরা বহুবার রাস্তা অবরোধ করেছেন, ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা অসিত কর্মকার বলছেন, ‘বাগদার বিধায়ক দুলাল বর, কমলাক্ষী বিশ্বাসরাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভোটে জিতে উপেন বিশ্বাস ব্রিজ নির্মাণের শিলান্যাস করেন, কিন্তু নির্মাণকাজ হয়নি।’ তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই জানা গিয়েছে,দীর্ঘ আন্দোলন অবরোধের পর টনক নড়ে প্রশাসন৷ ২০১৫ সাল নাগাদ সেতুটির নির্মাণের শিলান্যাস হয়। কিন্তু আজও তা তৈরি হয়ে ওঠেনি৷ সম্প্রতি ভোটের মুখে বাঁশ তুলে কাঠের বাটাম লাগিয়ে দিয়েছে সিন্দ্রানী পঞ্চায়েত। গ্রামবাসীদের কথায়, এই এলাকা রাজনৈতিক নেতাদের কাছে খুব একটা সুবিধার নয়৷ কারণ, এলাকায় ঢুকলেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে তাঁদের৷ প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও তা বারবার ভঙ্গ হচ্ছে কেন? এই প্রশ্নের সদুত্তর নেই কারও কাছেই৷ তাই এখনও পর্যন্ত এখানে পা পড়েনি কোনও দলের প্রার্থীর৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.