রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: নামেই বক্সা বাঘ বন। বাঘের দেখা নেই। বাঘ থাকার তেমন কোন প্রমাণও সাম্প্রতিককালে মেলেনি। তবু বাঘ বন। সরকারিভাবে ‘বক্সা টাইগার রিজার্ভ’। চলছে বিতর্ক। উঠছে অস্বস্তিকর প্রশ্ন। সেই কলঙ্ক ঘোচাতেই বাইরে থেকে বাঘ এনে ডুয়ার্সের ওই জঙ্গলে ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য বনদপ্তর। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেই গুড়েও বালি পড়ার জোগাড় এখন। তাই আপাতত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মেলাটা স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে।
অথচ বনদপ্তর সূত্রেই জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে বাইরে থেকে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এনে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি রাজ্যের ওই পরিকল্পনায় প্রাথমিক ছাড়পত্র দেয়। ঠিক হয় অসম থেকে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আনা হবে। তিনটি বাঘ আনার কথা ভাবা হয়। এর মধ্যে একটি পুরুষ এবং বাকি দুটি স্ত্রী। ২০১৮ সালের শেষে ওই বাঘ বক্সার জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এই প্রকল্পে আর আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না বনদপ্তর। তবে হাল ছাড়ছেন না বনকর্তারা। তাই বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে তৃণভোজীদের সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে বনদপ্তর। কেমন করে তৃণভোজীদের সংখ্যা বাড়ানো যায়। তাদের রক্ষণাবেক্ষণের উপায় কি সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের সাত আধিকারিক মধ্যপ্রদেশ পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে মালদার আদিনা ডিয়ার পার্ক থেকে ২১টি হরিণ বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে আনা হয়েছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে প্রাকৃতিক ঘেরাটোপে ওদের রাখা হয়েছে। পরে জঙ্গলে ছাড়া হবে। এরপর দফায় দফায় দেড়শো হরিণ বক্সা জঙ্গলে ছাড়া হবে। গরুমারা জাতীয় উদ্যান থেকেও হরিণ আনা হতে পারে। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণের জন্য মধ্যপ্রদেশের সাতপুরা ও বান্ধবগড় দুই জাতীয় উদ্যানে প্রশিক্ষণ হয়। সেখানেই ২০ জন আধিকারিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঘেদের খাবার বিভিন্ন প্রজাতির হরিণের যথেষ্ট পরিমান উপস্থিতি বক্সা বাঘ বনে নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ওই কারণে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প জুড়ে ২০০ হেক্টর জমিতে ঘাসের চাষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৭০ হেক্টর জমিতে এই ঘাসের চাষ শুরু হয়েছে। এছাড়াও রোগ সংক্রমণ ঠেকাতে প্রতি বছরের মতো জঙ্গলে যে সব গরু ছাগল ঘুরে বেড়ায় সেগুলিকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদেরও সচেতন করা হচ্ছে।
[৩ বাইসনের তাণ্ডবে ত্রস্ত গোটা গ্রাম, গুরুতর জখম চারজন]
কিন্তু এত প্রস্তুতির পরও কেন বাঘ আসছে না? বনকর্তাদের অভিযোগ, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পাঠাতে অসম সরকার তেমন উৎসাহী নয়। ওই কারণে বিহার ও মধ্যপ্রদেশের দ্বারস্থ হতে চলেছে রাজ্য বনদপ্তর। রাজ্যের বন্যপ্রাণ বিভাগের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা জানিয়েছেন, অসমের কাছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার চাওয়া হয়েছে। ওরা না দিলে বিহার ও মধ্যপ্রদেশের কাছে চাওয়া হবে। কারণ, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে বাইরে থেকে রয়্যাল বেঙ্গল নিয়ে আসার বিষয়ে পাকাপাকি সিদ্ধান্ত হয়েছে।” কিন্তু আশঙ্কা পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই? প্রশ্ন উঠেছে এই জঙ্গলের কেন বাঘ বিলুপ্ত হল? ভিন রাজ্যের জঙ্গল থেকে আনা বাঘেরা কতটা সুরক্ষিত থাকবে? সম্প্রতি গরুমারা জাতীয় উদ্যানে গন্ডার হত্যা, বিষমাংস দিয়ে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান লাগোয়া চা-বাগানে পর পর চিতাবাঘ খুনের ঘটনা আশঙ্কাকে জোরালো করেছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলের ভিতরে এখনও প্রায় ৪২টি বসতি রয়েছে। বনবসতির মানুষেরা চায় না জঙ্গলে মানুষখেকো বাঘ থাকুক। জঙ্গলের উপরে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের চাপ। এই পরিবেশ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের পক্ষে উপযুক্ত সেটাও বলছেন অনেকে। ১৯৮২ সালে এই জঙ্গল টাইগার রিজার্ভের স্বীকৃতি পায়। মোট ৭৬০ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ৪০০ বর্গ কিলোমিটার সংরক্ষিত। গত তিন দশকে এই জঙ্গলে বাঘের দেখা মেলেনি। তবুও বাঘসুমারি হয়। ২০১৪ সালে শেষ বাঘসুমারি হয়েছে। ‘পাগমার্ক’ মেলার সেই একই দাবি শোনা গিয়েছে। কিন্তু কোথায় বাঘমামা ?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.