বাবুল হক ও রাজ কুমার: নিপা ভাইরাসের আতঙ্ক এবার বাগানেও।
আমের জেলা মালদহ জুড়ে চাষিদের মধ্যে নিপা ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বাদুড়ের আক্রমণ ঠেকাতে গোটা জেলাতেই আমের গাছগুলি ঢেকে দেওয়া হচ্ছে জাল দিয়ে। একই অবস্থা লিচুগাছেও। আবার আলিপুরদুয়ারের মাঝেরডাবরি এলাকা লিচুর জন্য বিখ্যাত। সেখানেও একইভাবে কেউ জাল, কেউ মশারির নেট, আবার কেউ কাপড় দিয়ে গাছের ফল ঢেকে দিচ্ছেন।
[ পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধির জের, জুন থেকেই বাড়তে পারে বাস-ট্যাক্সির ভাড়া ]
নিপা ভাইরাস নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে দেশজুড়ে। বাদুড়ে খেয়েছে ফল। আর সেই ফল থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ। বাদুড় ও সেই জাতীয় পাখির খাওয়া যে কোনও ফল থেকেই নিপা ভাইরাসের রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমন আতঙ্কের জেরে আম ও লিচুর চাহিদা কিছুটা হলেও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা। শেষ মুহূর্তে নিপা-আতঙ্কে মালদহের অনেক আমবাগানে মশারির নেট দিয়ে গাছ ঢাকার কাজ শুরু হয়েছে। লিচু গাছেও এই নেট বা জাল ব্যবহার করছেন চাষিরা। তাতে বাদুড় বা পাখি আম খেয়ে নষ্ট করতে পারবে না। চাষিরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ বাগানে লিচু পাড়ার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। আম পাড়ার কাজও চলছে। এই অবস্থায় বাদুড় ও পাখিদের প্রতিরোধ করতে অনেক ফলন্ত গাছে মশারির নেট টাঙানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আতঙ্ক এতটাই যে, বহু চাষি আবার অপরিপক্ব অবস্থায় গাছ থেকে গোপালভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি, ল্যাংড়া ও গুটি জাতের আম পাড়ার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। উদ্যান পালন দপ্তরের বিশেষজ্ঞদের মতে, আম ও লিচুগাছে সচরাচর বাদুড়জাতীয় প্রাণীদের বাসা বাঁধতে দেখা যায় না। ইউক্যালিপটাস, তাল, বট জাতীয় বড় গাছেই বাদুড়ের বাসা থাকে। তবে বাগানের পড়ে থাকা ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
ইংলিশবাজারের গৌড়, ওল্ড মালদহের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা, কোতোয়ালি, মানিকচক-সহ বিভিন্ন জায়গায় এইভাবে গাছ মোড়ানো হয়েছে। কাদেরপুর এলাকার আমচাষি নারায়ণ ঘোষ, সুফল ঘোষ, দিলীপ ঘোষদের বক্তব্য, আমগাছ বড় হওয়ার কারণে নেট দিয়ে সম্পূর্ণ মোড়ানো যাচ্ছে না। তাড়াহুড়ো করে মাঝারি বা ছোট মাপের মশারির নেট দিয়ে ঢাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
[ পরকীয়ায় পথের কাঁটা, প্রেমিককে দিয়ে স্বামীকে খুন করাল স্ত্রী ]
আলিপুরদুয়ার জেলায় লিচু চাষের জন্য বিখ্যাত মাঝেরডাবরি এলাকা। এখানেও ছড়িয়েছে নিপা ভাইরাসের আতঙ্ক। আর তার জেরেই লিচু গাছগুলি ঢেকে দেওয়া হচ্ছে মশারির নেট, কাপড় বা জাল দিয়ে। মাঝেরডাবরির কৃষক বিনয় বর্মণ বলেন, “অন্যান্যবার আমরা ফলের গাছ ঢেকে দেওয়ার কথা ভাবিনি। কিন্তু এবার নিপা ভাইরাসের সংক্রমণের খবর পাওয়ায় বাদুড়ের হাত থেকে বাঁচাতে লিচু গাছ জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে।”
আলিপুরদুয়ার মহকুমা হর্টিকালচার বিভাগের আধিকারিক সন্দীপ মহন্ত বলেন, “আমরা শুনেছি চাষিদের মধ্যে নিপা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কিন্তু কোনও চাষি এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তবে জাল দিয়ে ফলের গাছ ঢেকে দিলে এমনি কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু সেই জালে আটকে কোন বাদুরের মৃত্যু যেন না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।”
আলিপুরদুয়ার জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “২০০১ সালে শিলিগুডি়তে থাবা বসিয়েছিল নিপা। এখনও পর্যন্ত আলিপুরদুয়ারে নিপা সংক্রমণের কোনও খবর নেই। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি। সব জায়গায় সচেতনতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.