সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: অনেকটা হরিণের মত দেখতে একটা প্রাণী মাঠের মধ্যে ছুটছে। গবাদি পশু দেখলেই তেড়ে আসছে। পুরুলিয়ার মফঃস্বল থানার গোলামারা গ্রামে রবিবার সন্ধ্যায় এমন কাণ্ড দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। ওই প্রাণীর হাত থেকে বাড়ির গরুগুলিকে বাঁচানোর জন্য তাকে ঘিরে ধরে রাখেন এলাকার মানুষ। এমন অবস্থায় মানুষের ভিড় থেকে বাঁচতে পাশের জলাধারে পড়ে যায় ওই প্রাণীটি। ততক্ষণে এই ঘটনার কথা জেনে যায় পুলিশ। গ্রামের সিভিক স্বেচ্ছাসেবকরা ওই জলাধারে ঝাঁপ দিয়ে তাকে উদ্ধার করে। ততক্ষণে ওই এলাকায় থাকা পুলিশের টহলদারি গাড়ি সেখানে চলে যায়। পৌঁছে যান বনদপ্তরের আধিকারিকরাও। তাঁরা জানান প্রাণীটি নীলগাই।
[ বেতন বাড়ছে সিভিক ভলানটিয়ার ও আশা কর্মীদের, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর ]
ব্যস! তারপর থেকেই ওই বন্যপ্রাণীকে দেখতে ভিড় উপচে পড়ে এলাকায়। রাতে বনদপ্তর পুলিশের সহায়তায় কংসাবতী উত্তর বনবিভাগের অধীনে থাকা পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে পুরুলিয়া মিনি জু–র একটি এনক্লোজারে রাখা হয় নীলগাইটিকে। কিন্তু সেখানেও ভিড়কে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এদিকে মানুষ দেখলেই চমকে উঠছে নীলগাই। এনক্লোজারের মধ্যে ছুটতে থাকায় জালে আঘাত লেগে তার মুখ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। ফলে ওই এনক্লোজারকে কালো প্লাস্টিক দিয়ে আপাতত ঘিরে রেখেছে বন দপ্তর।
কিন্তু প্রশ্ন, নীলগাইটি পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলায় কীভাবে এল? এ রাজ্যের উত্তরবঙ্গ ছাড়াও মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে এই প্রাণীর বাস। তাহলে কি তাকে কোথাও গাড়িতে করে পাচার করা হচ্ছিল? পুলিশ দেখে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়? এই আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না বনদপ্তর। শুধু তাই নয়। বনদপ্তরের কংসাবতী উত্তর বনবিভাগের পুরুলিয়া–পাড়া রে়ঞ্জের পুরুলিয়া দু’নম্বর বিটের যে গোলামারা গ্রাম থেকে এই নীলগাইটি উদ্ধার হয় সেই এলাকায় আরও এইরকম প্রাণী থাকতে পারে বলে দপ্তরের প্রাথমিক অনুমান। কারণ, ওই এলাকা থেকে সোমবার সকালে তাঁদের কাছে খবর এসেছে এই নীলগাইয়ের মতই আরও একটি প্রাণী ঘোরাফেরা করছে। কংসাবতী উত্তর বিভাগের ডিএফও অমৃতা দত্ত বলেন, “কীভাবে এই নীলগাইটি এল আমরা তা খতিয়ে দেখছি। পুলিশকেও গোটা বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।”
[ তৃণমূল নেতাকে দা দিয়ে কোপানোর অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে, উত্তাল বালুরঘাট ]
বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এটি পূর্ণবয়স্ক মাদী নীলগাই। ইতিমধ্যেই প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তর থেকে চিকিৎসকরা ওই নীলগাইটিকে দেখে গিয়েছেন। জলের সঙ্গে মিশিয়ে তাকে ওষুধপত্র দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে শাক জাতীয় খাবারও। কিন্তু নতুন পরিবেশে নীলগাইটি একেবারে মানিয়ে নিতে না পারায় সেভাবে খাবারও মুখে তুলছে না। এনক্লোজারে শুধু লাফিয়েই বেড়াচ্ছে। বনদপ্তর সূত্রে এও জানা গিয়েছে, নীলগাইটিকে সুস্থ করে তাকে কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রাখার পর ঝাড়গ্রামের চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হবে। কারণ এখানে সঙ্গী না পাওয়ায় মনমরা হয়ে যেতে পারে ওই বন্যপ্রাণীটি। ঝাড়গ্রামের চিড়িয়াখানায় একাধিক নীলগাই রয়েছে।
একনজরে নীলগাই:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.