ফাইল ছবি
সম্যক খান, মেদিনীপুর: এক দশকেরও বেশি পুরনো জোড়া মামলার তদন্তে এনআইএ (NIA) জেরার মুখে ছত্রধর মাহাতো। মাওবাদী সমর্থিত জনসাধারণ কমিটির প্রাক্তন নেতা, বর্তমানে তৃণমূলের রাজ্য কমিটির অন্যতম সম্পাদক ছত্রধরকে দফায় দফায় জেরা করছেন এনআইএ কর্তারা। শালবনির কোবরা ক্যাম্পে ডেকে শুক্রবার টানা চারঘণ্টা জেরার পর তদন্তকারীদের নির্দেশ মেনে তিনি জেরার জন্য শনিবারও হাজির হয়েছেন। এ নিয়ে জঙ্গলমহলের নেতা ছত্রধর মাহাতোর প্রতিক্রিয়া, সম্প্রতি তিনি মূলস্রোতের রাজনীতিতে ফিরেছেন, তৃণমূলে যোগ দিয়ে বড় দায়িত্বও পেয়েছেন। সেই কারণেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারীর সংস্থার তরফে তাঁর উপর এই চাপ তৈরি হচ্ছে।
২০০৯ সালে জঙ্গলমহলের সিপিএম নেতা প্রবীর মাহাতো খুন এবং ওই একই বছরে ভুবনেশ্বর-রাজধানী এক্সপ্রেস হাইজ্যাকের ঘটনায় প্রথম থেকেই অভিযোগের তির ছিল ছত্রধর মাহাতোর (Chhatradhar Mahato) দিকে। তখন তিনি জঙ্গলমহলে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, তৈরি করেছেন পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণ কমিটি। কার্যত জঙ্গলমহলের সাধারণ জনজীবনের রাশ অনেকটাই তাঁর হাতে। ছত্রধরকে গ্রেপ্তারির জন্য তৎপর হয় পুলিশ প্রশাসন। শেষমেশ গ্রেপ্তারের পর কয়েক বছরের কারাবাস কাটিয়ে ফেব্রুয়ারিতে জেলমুক্ত হন ছত্রধর মাহাতো। এরপরই রীতিমতো ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়ে তৃণমূলের সাংগঠনিক স্তরে রদবদল করতে গিয়ে সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে নিয়ে আসেন রাজ্য কমিটিতে।
জঙ্গলমহলের ওই দুটি নাশকতার মামলার তদন্তভার সম্প্রতি এনআইএ’র হাতে দিয়েছে কেন্দ্র। তারপরই তৎকালীন জঙ্গলমহলের নেতা ছত্রধর মাহাতোকে জেরার তোড়জোড় শুরু করেন তদন্তকারীরা। লকডাউন পরিস্থিতিতে প্রথমে তাঁকে কলকাতায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল জেরার জন্য। ছত্রধর জানান যে যানবাহন অপ্রতুল, তিনি যেতে পারবেন না। এরপর এনআইএ সিদ্ধান্ত নেয়, মেদিনীপুরে গিয়েই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সেইমতো শুক্রবার শালবনির কোবরা ক্যাম্পে তাঁকে ডেকে জেরা করেন এনআইএ তদন্তকারীরা। টানা চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ চলে। নেতৃত্বে ছিলেন ডিএসপি পদমর্যাদার এক অফিসার। শনিবার ফের তাঁকে জেরা করার জন্য কোবরা ক্যাম্পে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইমতো বেলা ১১টা নাগাদ তিনি শালবনির ওই ক্যাম্পে পৌঁছে যান। হঠাৎ ১১ বছরের পুরনো মামলায় কেন এনআইএ’র এত তৎপরতা? এ প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য রাজনৈতিক অভিসন্ধিই দেখছেন একদা জঙ্গলমহলের নেতা। ছত্রধরের কথায়, ”আমি রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থাকাটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা বলার অবকাশ রাখে না।” তাঁর আইনজীবী কৌশিক সিনহা বলছেন, ”এগারো বছরের পুরোনো একটি মামলা এটি। যা বিচারের দোরগোড়ায়। সেখানে নতুন করে তদন্তের উপর আইনগত প্রশ্নচিহ্ন আছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.