অর্ণব আইচ: অবশেষে এনআইএ-র জালে ধরা পড়ল খাগড়াগড় কাণ্ডের অন্যতম মূলচক্রী কওসর ওরফে বোমারু মিজান। বেঙ্গালুরুতে রীতিমতো ফাঁদ পেতে কওসরকে ধরেন এনআইএ। ধৃত কওসর জেএমবি-র উজির পদে ছিল। সংগঠন তৈরি করে নাশকতা চালানোয় পারদর্শী কওসর বেশ কিছুদিন ধরেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। কেরলে সম্প্রতি তার এক সহচর ধরা পড়তেই বিপাকে পড়ে যায় সে। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার ঘুরে বেঙ্গালুরুতে আত্মগোপনের চেষ্টায় ছিল। তবে বিশেষ ফল হল না। প্রত্যেকটি রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই কওসরের খোঁজে ছিল এনআইএ। সে যে নজর এড়িয়ে বেঙ্গালুরুতে রয়েছে, এনআইএ-কে খবরটি দিয়েছিল ওই রাজ্যের পুলিশ। তারপরই এদিন বোমারু মিজানকে গ্রেপ্তার করে এনআইএ।
জানা গিয়েছে, বীরভূমে কওসরের একটি বাড়িও রয়েছে। সেখান থেকেই একটা সময় এই রাজ্যের সংগঠন চালাত সে। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও বর্ধমানের বিভিন্ন মাদ্রাসাতে গোপনে অস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল কওসর। খাগড়া বিস্ফোরণের সঙ্গে জামাত-উল-মুজাহিদিন যোগসূত্র পাওয়া যেতেই আসরে নামে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। প্রতিবেশী বাংলাদেশের ব়্যাবের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। বাংলাদেশেও জামাত-উল-মুজাহিদিনের উজিরকে ধরতে শুরু হয় তৎপরতা। মাস তিনেক আগে দেশজুড়ে তল্লাশি অভিযানে নামে ব়্যাব। সেই সময়ই ফের সীমান্ত টপকে ভারতে পালিয়ে আসে কওসর। এদিকে খাগড়াগড় কাণ্ডে তদন্তে নেমে কওসরের নাম জানতে পারে এসটিএফ। এক কওসরকে ধরাও হয় তবে পড়ে জানা যায় খাগড়াগড় কাণ্ডের হোতা কওসর আসলে বোমারু মিজান। ধৃত কওসরের খাগড়াগড় কাণ্ডের যোগাযোগ নেই। এরপরেই তদন্তভার নেয় এনআইএ। বোমারু মিজানকে ধরতে জাল পাতা হয়। ব়্যাবের খানা তল্লাশির জেরে সে যে ফের ভারতে ঢুকে বসিরহাটে লুকিয়ে আছে। এআইএ-র কাছে খবর ছিল। সেইমতো অভিযানও চালানো হয়। তবে আগাম খবর পেয়ে ততক্ষণে গা-ঢাকা দিয়েছে কওসর। পর পর দু’বার এনআইএ-র হাত ফসকে পালিয়ে যায় এই জেএমবি জঙ্গি। এরপরেই বোমারু মিজানকে ধরতে প্রতিটি রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন এনআইএ-র কর্তারা। এদিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পালিয়ে তখন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে কওসর। কখনও ঝাড়খণ্ড তো কখনও বিহার। তবে শান্তিতে থিতু হতে পারছে না। এমনিতে ফোন ব্যবহার করে না এই জেএমবি জঙ্গি। তবে তার নেটওয়ার্ক এতটাই কার্যকরী যে পুলিশ খুঁজছে আগাম খবর পেয়ে সুনির্দিষ্ট স্থান থেকে পালিয়ে যায় কওসর।
এই জেএমবি জঙ্গির খবর পেতে পুরস্কারও ঘোষণা হয়। কওসর সম্পর্কে তথ্য দিতে পারলেই মিলবে ১০ লক্ষ টাকা। এমন ঘোষণাও করা হয়। তবে তারপরেও বোমারু মিজানের কোনও খবর ছিল না। এদিকে দু’বার হাত ফসকে যাওয়া আরো তৎপরতা দেখায় এনআইএ। এরমধ্যেই বিহারের বুদ্ধগয়াতে বিস্ফোরণ ঘটে গিয়েছে। তদন্তে নেমে জানা গিয়েছে, এর পিছনেও কওসরের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। এই ঘটনার পরেই কিছুদিন আগে দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের জেরা করে জানা যায় একজনের বাড়ি বীরভূম ও অন্যজনের মুর্শিদাবাদ। এরপরেই বোমারু মিজানকে জালে পুরতে ঝাঁপায় এনআইএর-কর্তারা। চলে ম্যারাথন জেরা। তার ভিত্তিতে কেরল থেকে এক জেএমবি জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়। তাকে জেরা করেই মিলেছে বোমারু মিজানের বর্তমান অবস্থান। তারপরই বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেপ্তার খাগড়াগড় খাণ্ডের এই মূলচক্রী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.