সৈকত মাইতি, তমলুক: লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই ফের ময়নার বাকচায় বিজেপি নেতা খুনের তদন্তে নামল এনআইএ। শনিবার দুপুরে এনআইএ -র ৪ সদস্যের একটি টিম ময়না থানার পাশাপাশি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। ভোটপ্রক্রিয়ায় মাঝেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের অতিসক্রিয়তা ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন দুপুর প্রায় একটা নাগাদ ৪ সদস্যের এনআইএর টিম প্রথমে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ময়না থানায় গিয়ে উপস্থিত হন। প্রয়োজনীয় নথি সামগ্রিক খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ঘটনাস্থল ময়নার বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গোড়ামাহাল এলাকা পরিদর্শনে যান। সেখানে নিহত বিজেপি নেতা বিজয়কৃষ্ণ ভূঁইয়ার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। সেই সঙ্গে বিজয়বাবুর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নদীর পাড় সংলগ্ন অস্থায়ী বাড়ি-সহ আশপাশ এলাকা পরিদর্শন করেন। যদিও এ বিষয়ে এনআইএর আধিকারিকরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
উল্লেখ্য, ময়নার গোড়ামহল এলাকার বাসিন্দা বিজয়কৃষ্ণ ভূঁইয়া(৬০)। ওই গ্রামে স্থায়ী পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও কিছুটা দূরে নদীর পাড় সংলগ্ন একটি অস্থায়ী বাড়ি তৈরি করে অধিকাংশ সময় থাকতেন বিজয়কৃষ্ণ। ২০২৩ সালের ১ মে সন্ধে প্রায় সাড়ে ৫টা নাগাদ একটি ভ্যানে করে কিছু ইটবোঝাই করে ওই অস্থায়ী বাড়ির উদ্দেশে যাচ্ছিলেন বিজয়কৃষ্ণ ও তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীদেবী। তখন ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল তাদের অতর্কিতে আক্রমণ করে। এর পর থেকেই বিজেপির ওই বুথ সভাপতি নিখোঁজ হয়ে যান বলে অভিযোগ। রাত ১২টা নাগাদ বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি পুকুর পাড় থেকে দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। স্বাভাবিক কারণেই বিজেপির বুথ সভাপতিকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগ ঘিরে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ময়নার বাকচা এলাকা। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দফায়-দফায় থানা ঘেরাও অবস্থান বিক্ষোভ, পথ অবরোধের পাশাপাশি ১২ ঘণ্টার ময়না বন্ধে শামিল হন বিজেপি নেতা-কর্মী, সমর্থকরা।
স্ত্রী লক্ষ্মী ভূঁইয়া জানান, রাজনৈতিক হিংসার কারণেই স্বামীকে খুন করা হয়েছে। তাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি দাবি জানান তিনি। এদিকে এই ঘটনায় খুনের মামলা-সহ একাধিক মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্তে নামে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ৩৪ জন তৃণমূল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর করে শুরু হয় তদন্ত। ৮ জন তৃণমূল নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হলেও বেশ কয়েকজন আবার জামিনে মুক্তি পেয়ে যায় বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় বিজেপি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্টের নির্দেশে আধা সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা পায় বিজয় কৃষ্ণের পরিবার। এরপর আরও একধাপ এগিয়ে আদালতের নির্দেশে এই ঘটনার তদন্ত এনআইএ হাতে যাওয়াতে রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
এ বিষয়ে ময়না ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সন্দীপব্রত দাস বলেন,”নির্বাচনের মধ্যে কেন্দ্রীয় এজেন্সির এই এলাকা পরিদর্শন আসা পরোক্ষভাবে এলাকায় সন্ত্রাস তৈরি করা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা বিজেপির কালচার। তবে আইনের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।” যদিও পালটা দাবি বিজেপির। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি আশিসকুমার মণ্ডল বলেন, “ময়নার বাকচাকে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে লাগাতার বোমাবাজি, মারধর হানাহানির পাশাপাশি একের পর এক নৃশংস খুনের রাজনীতি করে চলেছে রাজ্যের শাসক দল। আমরা এর প্রতিকার চাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.