শুভঙ্কর বসু: বকেয়া মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ (DA) নিয়ে ফের ব্যাকফুটে রাজ্য সরকার। চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল (SAT)। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য ফের হাই কোর্টে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘভাতা মিটিয়ে দিতে হবে বলে গত বছরই জানিয়েছিল স্যাট। এ নিয়ে রাজ্য সরকার (West Bengal Government) পুনর্বিবেচনার আরজিও চলতি বছরের জুলাই মাসেই খারিজ করে দিয়েছিল ট্রাইবুনাল। তারপরেও বকেয়া না মেটানোয় রাজ্যের বিরুদ্ধে ‘আদালত অবমাননা’র অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হয় কর্মচারী সংগঠন। বুধবার সেই মামলার ভারচুয়াল শুনানিতেই ডিএ মেটানোর সময়সীমা বেঁধে দেয় আদালত। প্রসঙ্গত, এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ১৬ ডিসেম্বর ধার্য করা হয়েছে।
ডিএ নিয়ে সরকারি কর্মীদের দীর্ঘদিনের লড়াই। প্রায় ৪ বছর ধরে এ নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। ২০১৬ সালে প্রথম কেন্দ্রীয় হারে ডিএ ও একই চাকরিতে অভিন্ন মহার্ঘ ভাতার হার বাতিলের দাবিতে স্যাটের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকারি কর্মীদের সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন। স্যাট তখন জানিয়ে দেয়, মহার্ঘভাতা রাজ্য সরকারি কর্মীদের অধিকার নয়। এটি সরকারের দয়ার দান। এরপর বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ হয়ে ডিভিশন বেঞ্চ পর্যন্ত গড়ায়। দীর্ঘ শুনানির পর হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, মহার্ঘ ভাতা সরকারি কর্মীদের অধিকার। তা থেকে তাদের বঞ্চিত করা যাবে না। কিন্তু কোন হারে তারা ভাতা পাবেন তা নির্ণয়ের জন্য মামলাটি আবার স্যাটের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। সেখানেও প্রায় বছরখানেক মামলাটির শুনানি চলার পর গত বছরের ২৬ জুলাই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে রায় দেন বিচারপতি রণজিৎ কুমার বাগ ও প্রশাসনিক সদস্য সুবেশ দাসের বেঞ্চ। পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার পর থেকে ষষ্ঠ বেতন কমিশন শুরুর সময়কাল, অর্থাৎ ২০০৯-এর ১ জুলাই থেকে ২০১৬-র পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত যে বকেয়া জমেছিল তাও নির্ণয় করে এক বছরের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় স্যাট।
যদিও স্যাটের এই নির্দেশ কার্যকর না করে বিষয়টি নিয়ে ফের পুনর্বিবেচনার আর্জি বা রিভিউ পিটিশন করে রাজ্য সরকার। জুলাই মাসে সেই আরজি খারিজ হয়ে যায়। এরপরও ডিএ মেটাই নি রাজ্য। উল্লেখ্য, বর্ধিত হারে ডিএ প্রদানের ক্ষেত্রে রাজ্যের অন্যতম যুক্তি ছিল, রাজ্য সরকারের আর্থিক পরিস্থিতি। সে বিষয়ে স্যাট অবশ্য আগেই জানিয়েছিল, অর্থ দপ্তরের বিবৃতি অনুযায়ী রাজ্যের রাজস্ব বেড়েছে। তাছাড়া জিএসটি চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিবছরই রাজস্ব বাড়ছে। তাই রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ এটা যুক্তিগ্রাহ্য নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.