সংগ্রাম সিংহ রায়, শিলিগুড়ি: দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তাকে (Raju Bista) কেন্দ্র করে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। বিরোধীদের অভিযোগ, বাংলা ভাগ চেয়েছেন বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা। সংসদে বসে ফের গোর্খাল্যান্ডের দাবি উসকে দিয়েছেন তিনি। যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে বিজেপি। তাঁদের পালটা দাবি, বিজেপি নীতিগত সিদ্ধান্ত থেকেই বাংলা ভাগের বিপক্ষে।
দু’দিন আগেই সাংসদ রাজু বিস্তা বিজেপির (BJP) নির্বাচনী ইস্তেহারে থাকা পাহাড়ের সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান দাবি করেন সংসদে। সেই সময় পাহাড়ের সঙ্গে তরাই-ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকাও জুড়ে দেন। সংসদে তিনি বলেন,”মোদি সরকার ইতিমধ্যে একাধিক বড় সমস্যার সমাধান করেছে। তাই পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের মানুষ আশা করেন গোর্খাল্যান্ড নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে তার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধান বের হবে। সেখানকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে গোর্খাল্যান্ডের দাবি জানিয়ে আসছেন। এটা সাংবিধানিক দাবি। সরকার দু’বার বিভিন্নভাবে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। তাই আমাদের দল ২০১৯ সালের নির্বাচনী ইস্তেহারে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল”। সেই প্রতিশ্রুতি দ্রুত পালনের আরজি জানান সাংসদ। তাঁর এই বক্তব্যকে হাতিয়ার করে মাঠে নামে তৃণমূল-সহ বিরোধী দলগুলি।
রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব একে উসকানিমূলক আচরণ বলে অভিযোগ করেছেন। গৌতমবাবু বলেন, “বিজেপির নেতারা পাহাড়ে এক, সমতলে আরেক এবং সংসদে অন্য বক্তব্য রাখছেন। তারা বাংলা ভাগের চক্রান্ত করছেন। যা আমরা শেষ রক্তবিন্দু থাকতে হতে দেব না। রাজনৈতিক ভাবেই বাংলা ভাগের চক্রান্ত রুখতে চরম প্রতিরোধ করা হবে”। শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা সিপিএম রাজ্য কমিটির সদস্য অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য সাংসদের বক্তব্যকে এখনই গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। তিনি বলেন, “বিজেপি নির্বাচনী ইস্তেহারে যা যা বলেছে, তার কোনওটাই পালন করেনি। পালন করবে, বলে এমন সদিচ্ছাও কোনওদিন দেখা যায়নি। সামনে নির্বাচন, তাই তারা বিভিন্ন রকম কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ভোট রাজনীতি করছেন। আমরা গতি প্রকৃতির দিকে নজর রাখছি।” যদিও বিজেপির রাজ্য সম্পাদক এবং উত্তরবঙ্গের কো-অর্ডিনেটর রথীন্দ্রনাথ বসুর দাবি, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাংসদের মন্তব্যের অপব্যাখ্যা করছে বিরোধীরা। আর সেই ফাঁদে পা দিয়ে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে”। তাঁর আরও দাবি, “বিজেপি নীতিগত সিদ্ধান্ত থেকেই বাংলা ভাগের বিপক্ষে। এ নিয়ে কোনও রকম দ্বিমত নেই।”
প্রসঙ্গত, বিমল গুরুং, মোর্চার নেতৃত্বে থাকাকালীন তরাই-ডুয়ার্স ও পাহাড়কে একসঙ্গে পৃথক রাজ্যের দাবি ডাক দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে জিটিএ গঠন হওয়ার পর সেই প্রস্তাব থেকে সরে আসে মোর্চা। ফলে পাহাড়ের নির্দিষ্ট এলাকা যা জিটিএর অধীন, তার মধ্যেই বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সীমাবদ্ধ থাকছিল। দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ, নতুন করে তরাই-ডুয়ার্সকে পাহাড়ের সমস্যার সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়ায় বিতর্ক এখন চরমে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.